পরিদর্শন সামলাতে ডাক্তার বদলি, ভোগান্তি রোগীদের

রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে পরিকাঠামোর ফাঁকফোকর ঢাকতে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র পরিদর্শনের সময় এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে চিকিৎসক-শিক্ষক নিয়ে গিয়ে কুমিরছানার মতো দেখিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:২৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

কৌশলটা পুরনো। যে-কোনও সময় পরিদর্শনের ধাক্কা সামাল দিতে ফের পুরনো ধারাতেই কুমিরছানা দেখানোর মতো করে শিক্ষক-চিকিৎসকদের এক জায়গা থেকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার জেরে ভোগান্তি বাড়ছে রোগীদের।

Advertisement

রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে পরিকাঠামোর ফাঁকফোকর ঢাকতে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র পরিদর্শনের সময় এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে চিকিৎসক-শিক্ষক নিয়ে গিয়ে কুমিরছানার মতো দেখিয়ে দেওয়া হয়। পাঁচটি নতুন মেডিক্যাল কলেজ চালু করার প্রস্তুতি চলছে বাংলায়। এমসিআই পরিদর্শনের সময়ও হয়েছে। বিশেষত কোচবিহার, ডায়মন্ড হারবার, রামপুরহাটে শিক্ষক-চিকিৎসক প্রয়োজন। তাই কলকাতা মেডিক্যাল, এনআরএস, ন্যাশনাল মেডিক্যাল থেকে শিক্ষক-চিকিৎসকদের বদলি করা হচ্ছে। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরও পাঠানো হচ্ছে জেলার হাসপাতালে। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে রোগীর চাপ বেশি, কিন্তু যথেষ্ট সংখ্যায় চিকিৎসক নেই।

স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানান, কোচবিহার বা রামপুরহাটে এখনও পরিকাঠামো সম্পূর্ণ হয়নি। তাই রোগীর চাপ তেমন নেই। কিন্তু এমসিআই যে-কোনও দিন পরিদর্শনে আসতে পারে। এমসিআইয়ের নিয়ম অনুযায়ী ৭৫% শিক্ষক-চিকিৎসক না-থাকলে মেডিক্যাল কলেজ স্বীকৃতি পাবে না। এমনিতেই রাজ্যে ডাক্তার-সঙ্কট চরমে। তাই স্বীকৃতি আদায়ের জন্য এক কলেজ থেকে অন্যত্র বদলি প্রয়োজন। কলকাতার পুরনো কলেজগুলিতে এমসিআই পরিদর্শনে আসবে বছর দুয়েক পরে। তাই আপাতত বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে নতুন কলেজগুলিতেই।

Advertisement

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, কলকাতা মেডিক্যাল বা এনআরএসে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক-চিকিৎসক আছেন মাত্র ৫৫%। কিন্তু রোগীর চাপ বাড়ছে। জেলার হাসপাতালে ঝকঝকে বহুতল থাকলেও পরিকাঠামো নেই। রেফার রোগও সারেনি। তাই শহরের হাসপাতালে রোগীর লাইন লম্বা হচ্ছে। রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা আরও কমে যাওয়ায় হয়রানি বা়ড়ছে। কলকাতা মেডিক্যালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘পরিদর্শন নেই। তাই শিক্ষক-চিকিৎসক নিয়োগের তৎপরতাও নেই। পরপর চিকিৎসক বদলি হচ্ছেন। কিন্তু রোগীর চাপ কী ভাবে সামলানো হবে, সেটা মোটেই ভেবে দেখা হচ্ছে না। এ ভাবে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যায় না।’’

নতুন মেডিক্যাল কলেজে বদলি হওয়া শিক্ষক-চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, নতুন নিয়োগের পরিবর্তে বদলিতে সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ, চিকিৎসক-রোগী অনুপাতের ঘাটতি বিপদ বাড়াবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোচবিহার মেডিক্যালের এক শিক্ষক-চিকিৎসক বলেন, ‘‘ছাত্র নেই। রোগীও নেই। বিভাগ চালু করার জন্য ঘরও তৈরি হয়নি। অথচ রোজ এমসিআইয়ের ভয় দেখানো হচ্ছে। হোটেল ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। কিন্তু পড়াতে বা রোগী দেখতে পারছি না।’’

রোগী পরিষেবাই মুখ থুবড়ে পড়া সত্ত্বেও নিয়োগ নিয়ে কেন তৎপর নয় স্বাস্থ্য দফতর? এক জায়গা থেকে অন্যত্র বদলি করলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? নতুন কলেজে পরিষেবা চালু করতে গিয়ে যদি কলকাতা মেডিক্যাল বা এনআরএসের মতো সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা ব্যাহত হয়, তা হলে ঢালাও মেডিক্যাল কলেজের সুফল কি পাওয়া যাবে? এই সব প্রশ্নে মুখে কুলুপ স্বাস্থ্যকর্তাদের।

‘‘নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে নতুন নিয়োগের কাজ শুরু হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চিকিৎসার মান ও পড়াশোনায় যে উন্নতি হচ্ছে, সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা সেটা ফের প্রমাণ করেছে। রাজ্যের হাসপাতাল প্রথম সারিতেই আছে,’’ বলছেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন