পুণ্য-জোয়ারে রাস্তার নাভিশ্বাস

পুণ্যার্থীদের রকমারি খাবার ও পানীয় বিতরণ করনেওয়ালা আর একটি দলের সৌজন্যে গোটা রাস্তা জুড়ে উচ্ছিষ্ট খাবার, থার্মোকলের প্লেট, প্লাস্টিকের গ্লাসের ছড়াছড়ি। তাতে হড়কে পড়ছে সাইকেল, মোটর সাইকেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ১০:১০
Share:

যত্রতত্র: বেহাল রাস্তা। সোমবার বারাসতে । ছবি: সুদীপ ঘোষ।

শ্রাবণ মাস, তিন রাস্তার সর্বনাশ!

Advertisement

পুণ্যার্থীর স্রোতে ত্রাহি-ত্রাহি দশা বিটি রোড, জিটি রোড আর ব্যারাকপুর-বারাসত রোডের।

কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলের অতি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পথ আপাতত ঘন বর্ষার জলের বদলে ভক্তিরসের দাপটে খাবি খাচ্ছে। কোটি-কোটি লোক সেখানে বাঁক কাঁধে ছুটছেন। গন্তব্য হয় তারকেশ্বর, নয় তো চাকলা-কচুয়া। আর সেই উপচে পড়া মানুষের স্রোতে সন্ধের পর থেকে ব্যস্ত রাস্তাগুলোর অর্ধেক বন্ধ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস-গাড়ি থমকে। অফিসফেরত ঘর্মাক্ত জনতা বিপর্যস্ত, অসহায়। ধর্মের ব্যাপার বলে কথা, তাই পুলিশ-প্রশাসন নীরব দর্শক।

Advertisement

পুণ্যার্থীদের রকমারি খাবার ও পানীয় বিতরণ করনেওয়ালা আর একটি দলের সৌজন্যে গোটা রাস্তা জুড়ে উচ্ছিষ্ট খাবার, থার্মোকলের প্লেট, প্লাস্টিকের গ্লাসের ছড়াছড়ি। তাতে হড়কে পড়ছে সাইকেল, মোটর সাইকেল। গত রবিবার সন্ধ্যায় শুধু ব্যারাকপুর-বারাসাত রোডেই মোটর সাইকেল পিছলে পড়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা ১৬। কেউ সামান্য জখম।

সমস্যা দ্বিগুণ হয়েছে রাস্তার ধারে দু’হাত পর-পর তৈরি হওয়া অস্থায়ী মঞ্চের মাইকে তারস্বরে বাজতে থাকা শ্যামাসঙ্গীত, আধুনিক, রক-পপগানে। বাবা তারকনাথ বা লোকনাথের লম্বা কাটআউটের সামনে জেবিএল সাউন্ড সিস্টেমে তারস্বরে বাজছে গান আর তার সঙ্গে উদ্দাম নাচের ফাঁকেই বাড়ানো হাতে উঠে আসছে সরবতের গ্লাস, মিষ্টি বা খিচুড়ির প্লেট, এমনকী দামি ব্র্যান্ডের চকোবার আইসক্রিম-ও। ভক্তের দল দৌড়তে-দৌড়তে যত না খাচ্ছে, ছড়াচ্ছে তার থেকে বেশি। লাঠি হাতে স্বেচ্ছাসেবীরা ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায়। কোনও গাড়ি এগোনোর চেষ্টা করলেই দমাদ্দম লাঠির ঘা।

পুণ্যার্থীদের অনেকেই মোটর বাইক আরোহী। কোনওটাতে দুই, কোনওটাতে তিনজন। হেলমেটের বালাই নেই। পুলিশের নাকের ডগায় চোখ ধাঁধানো এলইডি আলো লাগিয়ে প্রবল গতিতে ছুটছে বাইক।

গোটা শ্রাবণ মাস জুড়ে বিটি রোড ও জিটি রোডে তারকেশ্বরগামী মানুষের ঢল। শুক্র ও শনিবারগুলোতে তা চরমে পৌঁছয়। আবার জন্মাষ্টমীর আগে ভিড় তুঙ্গে ওঠে বিটি রোড ও ব্যারাকপুর-বারাসত রোডে। ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তম দাস বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের গ্লাস মাটিতে মেশে না। নষ্টও হয় না। সাফ করানো হচ্ছে। কিন্তু এগুলো কী ভাবে পুরোপুরি নষ্ট করা যাবে সেটাই চিন্তার।’’ অন্য দিকে ব্যারাকপুরের সিপি সুব্রত মিত্র বলেন, ‘‘ধর্মের নামে উচ্ছৃঙ্খলতা আর নিয়ম না মানার যে জিগির, এটা একটা অসুখ। একে বন্ধ করতে কড়া আইন দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন