বন্ধ ট্রাকও, টান পাহাড়ের খাদ্যে

বিজনবাড়িতে সন্ধের পরে পাড়ার একটি মুদি দোকান খোলে। সেখান থেকেই প্রতিদিন ময়দা, ডিম, চাউমিন কিনেছেন এলাকার পরিবারগুলি। শনিবার রাতেই দোকানের ভাণ্ডার শেষের মুখে।

Advertisement

প্রতিভা গিরি ও অনির্বাণ রায়

দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ০৩:৪৭
Share:

চার দিন আগে বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটা নাগাদ মোর্চা ঘোষণা করেছিল, তখন থেকেই পাহাড়ে অনির্দিষ্ট কালের বন্‌ধ শুরু। দার্জিলিঙের গাড্ডিখানার বাসিন্দা শিরিং প্রধান সে কথা শুনেই রান্নাঘরে গিয়ে দেখেন, বড় জোর কেজি তিনেক চাল, কিছু আলু আর ডজন খানেক ডিম রয়েছে। দ্রুত জজবাজারে ছুটেওছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে বেশির ভাগ দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কয়েক প্যাকেট সোয়াবিন পেয়েছিলেন শুধু। সে সবই শেষের পথে। চালও বাড়ন্ত। এ বার বন্‌ধ চললে খাবেন কী, সে প্রশ্নের উত্তর জানেন না।

Advertisement

পাহাড়ের শহর-গ্রামে তাই এখন প্রধান আলোচ্য, খাবার জোগাড় হবে কী করে? মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেন, ‘‘এর আগেও বন্‌ধ হয়েছে। খাবার ঠিকই মিলবে।’’ কিন্তু তাতে পাহাড়ের মানুষ আশ্বস্ত হচ্ছেন না। মোর্চা কর্মী-সমর্থকদের হেঁশেলেও ফুরোচ্ছে রসদ। দার্জিলিঙের সোনা শেরিং বলেন, ‘‘একে তো পর্যটকেরা নেমে যাওয়ায় বড় লোকসান হয়েছে। তারপর এখন চিন্তা—কী খাব?’’

বিজনবাড়িতে সন্ধের পরে পাড়ার একটি মুদি দোকান খোলে। সেখান থেকেই প্রতিদিন ময়দা, ডিম, চাউমিন কিনেছেন এলাকার পরিবারগুলি। শনিবার রাতেই দোকানের ভাণ্ডার শেষের মুখে। সমতল থেকে ট্রাক না এলে পাহাড়ের ছোট বড় গ্রামের এই সব মুদি দোকানের বেশির ভাগই সোমবার থেকে ফাঁকা পড়ে থাকবে। চিন্তায় পাহাড়ের ঘরনীরা। কোথাও যেটুকু রসদ রয়েছে, প্রতিবেশীরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিচ্ছেন। বিজনবাড়ির বাসিন্দা গণেশ বরাইলি বলেন, ‘‘চাল প্রথম দু’দিনেই শেষ। মোমো আর ডিম খেয়ে আছি। আজ রাতে ময়দাও শেষ হয়ে যাবে। ঘরে শুধু দু’প্যাকেট পাউরুটি রয়েছে।’’

Advertisement

তাই লাগাতার বন্‌ধ চলতে থাকায় খাদ্য সঙ্কটের দিকেই এগোচ্ছে দার্জিলিং। শনিবার থেকে সিকিমের দিকেও পণ্যবাহী গাড়ি বেশি যায়নি।

যা নিয়ে উদ্বেগে সমতলের ব্যবসায়ীরাও। শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে প্রতিদিন ভোর থেকে আনাজ, আলু, মাছ বোঝাই ট্রাক উঠতে শুরু করে পাহাড়ে। সে সব বন্ধ। পাহাড়ে প্যাকেটজাত খাদ্য থেকে কাঁচামাল, নির্মাণ সামগ্রী সবই পৌঁছয় সমতল থেকে। অনির্দিষ্টকালের বন্‌ধে তাই ক্ষতির মুখে সমতলও।

আরও পড়ুন: থমথমে পাহাড় জুড়ে শোকমিছিল

রবিবার শিলিগুড়িতেও তাই বিধান রোডের পাশের চায়ের দোকানদার, চম্পাসারির মাছের আড়তদার, শিলিগুড়ির মহাবীরস্থান উড়ালপুলের নীচের ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। গলির মুখে চা-ডিম-টোস্টের দোকানও সকাল থেকে ফাঁকা। দোকানদার তপন সাহা বলেন, ‘‘পাহাড় থেকে কেউই আসছেন না। আমারও তো তাই চলছে না।’’

মুখ ভার হোটেল ব্যবসায়ীদেরও। বিধান মার্কেটে সার দিয়ে খাবারের নানা হোটেলে ভরা মরসুমে পর্যটকদের ভিড় করতেন। সেখানেও টেবিল খালি। হোটেলের মালিক বাচ্চু ঘোষের কথায়, ‘‘রোজ অন্তত পাহাড়ের ১০-১৫টি পরিবার খেতে আসত। আসতেন পর্যটকরা। কিন্তু এমন চললে পদ কমিয়ে দেব।’’

উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাসের দাবি, শিলিগুড়ির মোট ব্যবসার অন্তত ৭৫% ঘাটতি চলছে। শনিবার থেকে সিকিমেও পণ্যবাহী ট্রাক গিয়েছে কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন