Sand Smuggling

বালির ‘প্যাড’ চলছেই, নালিশ ট্রাক মালিকদের

স্থানীয় নানা সূত্রে জানা যায়, ট্রাক-ডাম্পারে কয়লা নিয়ে যাওয়ার জন্য বেআইনি কারবারিদের কাছ থেকে এই রকম ‘প্যাড’ কেনার রেওয়াজ পশ্চিম বর্ধমানে দীর্ঘদিন চালু রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঘাট থেকে বালি পরিবহণের জন্য গাড়ি পিছু মোটা টাকা দিয়ে ‘প্যাড’ কিনতে হচ্ছে, ফের অভিযোগ করল ট্রাক মালিকদের একটি সংগঠন। ‘ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে ওই সংগঠনের দাবি, রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের কাছে সম্প্রতি এ বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। এর আগে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অ্যাসোসিয়েশন’ নামে এক সংগঠনের তরফেও একই রকম অভিযোগ জানানো হয়েছিল। পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের যদিও দাবি, তাদের কাছে এমন কোনও কারবারের খবর নেই।

Advertisement

স্থানীয় নানা সূত্রে জানা যায়, ট্রাক-ডাম্পারে কয়লা নিয়ে যাওয়ার জন্য বেআইনি কারবারিদের কাছ থেকে এই রকম ‘প্যাড’ কেনার রেওয়াজ পশ্চিম বর্ধমানে দীর্ঘদিন চালু রয়েছে। এই ‘প্যাড’ আসলে অবৈধ কারবারে চালু একটি ‘রসিদ’, যা সঙ্গে থাকলে পশ্চিম বর্ধমান থেকে কলকাতার পথে গাড়ি নিয়ে যেতে কোনও ‘ঝঞ্ঝাট’ পোহাতে হয় না। ট্রাক মালিকদের একাংশের দাবি, আগে বালি পরিবহণের ক্ষেত্রে এক ধরনের ‘কার্ড’ চালু ছিল, যা ‘নির্বিঘ্নে’ যাতায়াতে সহায়ক হত। আড়াই-তিন হাজার টাকায় তা কিনতে হত। গত দেড় বছর ধরে ‘প্যাড’ দেওয়া হচ্ছে। তার দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে বেড়ে এখন ৬,১০০ টাকায় পৌঁছেছে।

ট্রাক মালিকদের ওই সংগঠনের অভিযোগ, জুনের গোড়া থেকে দুর্গাপুরের গৌরবাজারের বেশ কিছু ঘাটের মালিক এক ব্যক্তি এবং বেআইনি কয়লা কারবারের চাঁই হিসেবে খনি-শিল্পাঞ্চলে পরিচিত এক জন ৬,১০০ টাকা দামের প্যাড চালু করেছে। বালি পরিবহণের সময়ে তা সঙ্গে না রাখলে গৌরবাজার, রানিগঞ্জ, পানাগড়, গলসি, জামালপুর, বড়শুল-সহ বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক আটকে চালকদের হেনস্থা করা হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমান ও হুগলির বিভিন্ন জায়গাতেও গাড়িতে ‘প্যাড’ রয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। এই বেআইনি পদ্ধতির জন্য ট্রাক পিছু ৬,১০০ টাকা দিতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে সংগঠনটির সদস্যদের অনেকের দাবি।

Advertisement

ট্রাক মালিক সংগঠনের সদস্যদের অভিযোগ, ‘প্যাড’ সঙ্গে থাকলে অতিরিক্ত বালি বোঝাই গাড়িও ছাড় পেয়ে যায়। পুলিশ, পরিবহণ দফতর, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীদের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশে এই কারবার চলছে বলে অভিযোগ। ওই সংগঠনের রাজ্যের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবীর চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এর বিরুদ্ধে ১২-১৪ অক্টোবর রাজ্য জুড়ে ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। তার পরেও কেউ বেআইনি কার্যকলাপ বন্ধের দিকে নজর দিচ্ছে না। ফলে, অনেকেই ট্রাক বিক্রি করে ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।’’

ট্রাক মালিকেরা জানান, বিভিন্ন জেলায় ট্রাক-ডাম্পারে বালি পরিবহণের পরিমাণ আলাদা। কী ধরনের এলাকা, কোন রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাতায়াত করে, তার ভিত্তিতে বালি বোঝাইয়ের মাত্রা ঠিক করে প্রশাসন। পশ্চিম বর্ধমানের নানা ঘাট থেকে এক হাজার সিএফটি-র আশপাশে বালি তোলা যায়, যা বিক্রি হয় প্রায় পনেরো হাজার টাকায়। আবার পূর্ব বর্ধমানের নানা এলাকায় ৬৬০ সিএফটি বালি বোঝাই করার ছাড়পত্র রয়েছে। তার দাম প্রায় ৯,৫০০ টাকা। ট্রাক মালিকদের অনেকের দাবি, মোটা দামে ‘প্যাড’ কিনতে হওয়ায় লাভ প্রায় কিছুই থাকছে না। বালির দামের সঙ্গে ‘প্যাড’-এর দাম জুড়লে ক্রেতারা বেঁকে বসছেন, বরাত কমে যাচ্ছে। ফলে, উভয় সঙ্কটে পড়ছেন তাঁরা।

পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ হাতে আসেনি। তবে বিষয়টি যখন জেনেছি, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশকেও তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলব।’’ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘আমাদের জেলায় এখন এ ধরনের কোনও কারবার চলার অভিযোগ নেই। তবে খোঁজ নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন