ভাগের সেতু দেখবে কে, টানাপড়েন 

গঙ্গার উপরে বালি ও দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে থাকা দু’টি সেতু নিয়ে এমনই অভিযোগ স্থানীয় যানবাহন চালকদের। তাঁরা জানান, বহু বছর ধরেই বালি ব্রিজ এবং নিবেদিতা সেতুর আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব রয়েছে দু’টি কমিশনারেটের তিন-চারটি থা‌না ও ট্র্যাফিক গার্ড।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০১:৪১
Share:

যুগলে: বালি ব্রিজ ও নিবেদিতা সেতু। ফাইল চিত্র

এ যেন ভাগের মা গঙ্গা না পাওয়ার মতোই অবস্থা!

Advertisement

গঙ্গার উপরে বালি ও দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে থাকা দু’টি সেতু নিয়ে এমনই অভিযোগ স্থানীয় যানবাহন চালকদের। তাঁরা জানান, বহু বছর ধরেই বালি ব্রিজ এবং নিবেদিতা সেতুর আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব রয়েছে দু’টি কমিশনারেটের তিন-চারটি থা‌না ও ট্র্যাফিক গার্ড। ফলে যানজট মোকাবিলা থেকে শুরু করে যে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা সামাল দিতে ‘আমরা-ওঁরা’ পরিস্থিতি হয় বলেই অভিযোগ। ভোগান্তি হয় সাধারণ মানুষের।

বালি ব্রিজে ৮টি গম্বুজের মতো কাঠামো রয়েছে। এই কাঠামো দিয়েই নিজেদের সীমানা চিহ্নিত করে হাওড়া কমিশনারেটের বালি এবং ব্যারাকপুর কমিশনারেটের বরাহনগর ও বেলঘরিয়া থানা। পুলিশ সূত্রের খবর, ব্রিজের প্রথম তিনটি গম্বুজ পর্যন্ত এলাকা বালি থানার অধীনে। আবার দক্ষিণেশ্বরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় ওই প্রথম তিনটি বাদ দিলে বাকিটা বেলঘরিয়া থা‌না এলাকা। উল্টো দিকে দক্ষিণেশ্বর থেকে আসার রাস্তায় বালির সীমানার আগে পর্যন্ত বরাহনগর থানার দায়িত্ব। আর রেললাইনের দায়িত্বে রয়েছে আরপিএফ ও জিআরপি।

Advertisement

স্থানীয়দের অভিযোগ, এত ভাগাভাগি কখনওই সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তাই অনেক সময়েই কোনও ঘটনা ঘটলে সমস্যায় পড়তে হয়। যেমন, কোনও ছিনতাই হল কিংবা কেউ সেতু থেকে ঝাঁপ দিলেন। সে ক্ষেত্রে যে থানাতেই খবর যাক না কেন, জানতে চাওয়া হয় কত নম্বর পিলারের কাছে হয়েছে। দুই কমিশনারেটেরই পুলিশ আধিকারিকের দাবি, কাজের সুবিধার জন্য ওটা জানতে চাওয়া হয়। তবে কেউ না বলতে পারলেও ক্ষতি নেই। তাঁরা নিজেরা গিয়ে দেখে নেন।

এই ভাগাভাগির জেরে সেতুর স্টিলের কাঠামো রোদ, জল থেকে বাঁচার জন্য যে লোহার প্লেট দিয়ে ঢাকা দেওয়া ছিল, তা দিনের পর দিন চুরি হয়ে গেলেও আটকানো সম্ভব হয়নি। কারণ, সেটি নজরদারির দায়িত্ব কার, তা নিয়েই রয়েছে বিতর্ক। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, বেশ কয়েক বছর আগে সেতুতে এক ভরঘুরের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর মাথা ছিল বরাহনগরে, আর পা ছিল বালিতে। কোন থানা তাঁর মৃতদেহ তুলবে, তা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল।

বালি ব্রিজের পাশে ছ’লেনের নিবেদিতা সেতুর দায়িত্বে রয়েছে হাওড়া কমিশনারেটের নিশ্চিন্দা, বালি এবং ব্যারাকপুর কমিশনারেটের বরাহনগর থানা। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুর কোন অংশ বালি আর কোন অংশ নিশ্চিন্দা, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, রাজচন্দ্রপুর টোল প্লাজা থেকে বালিহল্ট পর্য‌ন্ত সেতুর অংশ দেখে নিশ্চিন্দা থানা। এর পর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার অর্থাৎ, গঙ্গার উপরে সেতুর তিনটি পিলার পর্যন্ত রয়েছে বালি থানার দায়িত্ব।

এখানেও রয়েছে সমস্যা। ধরা যাক, বালিঘাটে নিবেদিতা সেতুর উপরে কোনও ঘটনা ঘটেছে, সেখানে বালি থানার পুলিশের যেতে গেলে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে গিয়ে রাজচন্দ্রপুর টোল প্লাজা দিয়ে ঢুকে তবেই ঘটনাস্থলে আসতে হবে। কারণ, মাঝে ওই সেতুতে ঢোকার কোনও উপায় নেই। আবার কাজ হয়ে গেলে ওই রাস্তায় ফেরার উপায় নেই। কারণ, ডিভাইডারের মাঝে কোনও কাটা অংশ নেই। ফলে দক্ষিণেশ্বর গিয়ে বালি ব্রিজ ধরে ফিরে আসতে হয়। একই রকমের সমস্যা বরাহনগর পুলিশেরও। বালির সীমানার পর থেকে তাদের এলাকা শুরু।

দু’টি ব্রিজকে নিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হয় বালি ও ডানলপ ট্র্যাফিক পুলিশকেও। কারণ, সীমানা ভাগাভাগি রয়েছে তাদেরও। যেহেতু ব্রিজের উপরে গাড়ি পার্ক করা বিপজ্জনক, তাই হাওড়া কিংবা ব্যারাকপুরের মধ্যে কারও বিশেষ অনুষ্ঠান থাকলে নো-এন্ট্রি করতে হয় অন্যের এলাকায় গিয়ে। তাতে একটি এলাকা ফাঁকা থাকলেও যানজটে ফাঁসতে হয় অন্যকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন