জলদাপাড়া জমিয়ে রাখছে হিরো-পাগলা

গণ্ডার, বাইসন, হরিণের দেখা না মিললেও ক্ষতি নেই। এই দুই ছানাকে নিয়েই হইচই করছেন পর্যটকরা।

Advertisement

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৯
Share:

মায়ের সঙ্গে সাফারিতে ‘হিরো’। জলদাপাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

কখনও তারা গলে যাচ্ছে মায়ের পায়ের ফাঁক দিয়ে। কখনও ঢলে পড়ছে দিদার গায়ে। কখনও আবার আপন খেয়ালে মাথা দুলিয়ে ছুটছে এ ধার ও ধার। দুই হাতির ছানা ‘হিরো’ আর ‘পাগলা’ই এখন জলদাপাড়ার মূল আকর্ষণ।

Advertisement

গণ্ডার, বাইসন, হরিণের দেখা না মিললেও ক্ষতি নেই। এই দুই ছানাকে নিয়েই হইচই করছেন পর্যটকরা।

এই অভয়ারণ্যের দুই কুনকি হাতি ‘ডায়না’ ও ‘মীনাক্ষি’র ছানা তারা। বয়স মোটে ছ’মাস। তাদের দিদা চম্পাকলিও এখানকারই কুনকি পরিবারের সদস্য। হলং বনবাংলোর সামনে থেকে রোজ সকালে পর্যটকদের জঙ্গল ঘোরাতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আপাতত সেখানেই ‘ডিউটি’ চম্পাকলি ও তার দু’মেয়ে ডায়ানা ও মীনাক্ষির। কাজের মধ্যেও ছানাদের আগলে রাখার চেষ্টা চলে দুই মায়ের।

Advertisement

অন্য দিকে নাতনিদের সঙ্গে খুনসুটি চলে দিদারও। আর এ সমস্ত দৃশ্যই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন পর্যটকরা।

মীনাক্ষিরও মেয়ের ডাক নাম ‘হিরো’। আর ডায়ানারও মেয়েকে বনমহলে সবাই আদর করে ডাকেন ‘পাগলা’ বলে। বনকর্মীরাতো বটেই পর্যটকদের আলোচনাতেও তাদেরই নাম। ছানাদের গতিবিধির নানা মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করতে চলছে রীতিমতো প্রতিযোগিতা।

ছানা দু’টিকে চোখে হারায় মায়েরা। তাই পর্যটকদের নিয়ে জঙ্গল ঘোরানোর সময় তাদেরও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গোটা পথ মায়েদের গায়ের সঙ্গে একরকম লেপটেই থাকে তারা। সামান্য থমকালেই চলে মায়ের স্তনে মুখ গুঁজে দুধ খাওয়ার চেষ্টা। মীনাক্ষির ছানা ‘হিরো’ আবার সুযোগ পেলে মাকে ছেড়ে ‘দিদা’ চম্পাকলির সঙ্গেও খুনসুটি করে। তখন শুঁড় দিয়ে আলতো করে হিরোকে সরিয়ে দেওয়ার ‘সস্নেহ’ ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় রোজই। আবার ‘জঙ্গল সাফারি’র সময়ে পথে ছোট্ট নদী পড়লে শুঁড়ে করে জল তুলে মায়ের গায়ে ছিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে দুই দস্যি শাবক। কখনও নদীর ধারে থাকা বকের তাড়া খেয়ে তারা পালানোর চেষ্টা করলে তখন আবার শুঁড় দিয়ে বাধা দেয় মা।

এই সব দৃশ্য বহুদিন মনে থাকবে বলে জানালেন, অসমের নবীন ডেকা ও তাঁর স্ত্রী পিয়ালি। মধুচন্দ্রিমায় ডুয়ার্সে গিয়ে ‘এলিফ্যান্ট সাফারি’র জন্য টিকিট চেয়েও পাননি। হলংয়ে গিয়েছিলেন যদি সুযোগ মেলে সে কথা ভেবে। হাতির পিঠে ওঠা হয়নি। তবু পিয়ালি বললেন, ‘‘দুই মায়ের সঙ্গে ছানাদের খুনসুটি দেখেই মন ভরে গিয়েছে। এটাই সারা জীবন মনে থাকবে।’’

জলদাপাড়া কোচবিহার বন বিভাগের আওতায়। ডিএফও বিমান বিশ্বাস নিয়মিত হলংয়ে গিয়ে হাতির ছানা দু’টির খবরাখবর নেন। জানালেন, ওদের বয়স দেড়-দু বছর হলেই প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হবে। তখনই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নাম দেওয়া হবে। তবে বন বিভাগের মাহুত ও পাতাওয়ালাদের প্রায় সবাই জানান, ছোটও থেকে মায়েদের সঙ্গে সাফারি করায় প্রশিক্ষণেও দ্রুত সাড়া দেবে ছানা দু’টি। পর্যটকদের সম্পর্কে ভয়ও থাকবে না।

হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) কো অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘দুধের বাচ্চাকে ছেড়ে হাতি-মা বেশিক্ষণ নিশ্চিন্তে থাকতে পারে না। সে দিক থেকে দেখলে বাচ্চা দু’টিকে জঙ্গল সাফারিতে নিয়ে গিয়ে ঠিকই করা হচ্ছে। তবে জঙ্গলে শাবক দু’টিকে নিয়ে যাতায়াতের সময় বাড়তি সাবধানতা নেওয়া জরুরি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement