সুকন্যা ও কিশলয়ে যক্ষ্মায় মৃত্যু, বালাই নেই পরীক্ষার

• হোমের নাম ‘সুকন্যা’। সল্টলেকের ওই সরকারি হোমে ২ জানুয়ারি রাতে মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে এক কিশোরীর। হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় ৪ তারিখে। চিকিৎসকেরা মৌখিক ভাবে হোম-কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিলেন, মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে যক্ষ্মায়।

Advertisement

কাজল গুপ্ত ও দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৫
Share:

• হোমের নাম ‘সুকন্যা’। সল্টলেকের ওই সরকারি হোমে ২ জানুয়ারি রাতে মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে এক কিশোরীর। হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় ৪ তারিখে। চিকিৎসকেরা মৌখিক ভাবে হোম-কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিলেন, মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে যক্ষ্মায়।

Advertisement

• হোম ‘কিশলয়’। কালীপুজোর পরে পরেই বারাসতের ওই হোমে যক্ষ্মায় মৃত্যু হয় এক কিশোরের।

নিয়মিত চিকিৎসায় যক্ষ্মা সেরে যায়। অথচ ওই দু’টি ক্ষেত্রেই চিকিৎসকদের বক্তব্য, ঠিক সময়ে চিকিৎসা হয়নি ওই কিশোর-কিশোরীর। তার জেরেই মৃত্যু।

Advertisement

ঠিক কী দশা হয়েছিল মেয়েটির?

সুকন্যা হোম সূত্রের খবর, বছর চোদ্দোর মেয়েটির ওজন এক মাসে প্রায় পাঁচ কিলোগ্রাম কমে গিয়েছিল। খেতেও চাইত না। হোমের চিকিৎসক কিছু ধরতে পারেননি। পরে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর থেকে আসা চিকিৎসকেরা কিছু পরীক্ষা করাতে বলেন। ২ জানুয়ারি রাতে সেই পরীক্ষা চলাকালীনই তার মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করে। সেই রাতেই তাকে বিধাননগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসা শুরুর দু’দিনের মাথায় সে মারা যায়।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার শিশু কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীঘাটের ওই কিশোরীকে অপহরণ করে উত্তরপ্রদেশে পাচার করা হয়েছিল। সেখানে একটি বারে নাচতে হতো তাকে। এক যুবক বছর দেড়েক আগে মেয়েটিকে কলকাতায় নিয়ে এলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সুকন্যায় পাঠায়। পাঠানোর আগে নাম-কা-ওয়াস্তে তার ডাক্তারি পরীক্ষা একটা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু যক্ষ্মার মতো কোনও অসুখ আছে কি না, সেই পরীক্ষা করানো হয়নি।

প্রায় একই দশা হয়েছিল কিশলয় হোমের বছর তেরোর কিশোরটির। সেখানে ছেলেটির যখন চিকিৎসা শুরু হয়, তখন সে পৌঁছে গিয়েছে যক্ষ্মার শেষ পর্যায়ে। হাওড়া স্টেশন থেকে উদ্ধারের পরে হাওড়ার একটি হোমে রাখা হয়েছিল তাকে। সেখানে থাকাকালীনই তার যক্ষ্মা ধরা পড়ে। কিন্তু তার কোনও রকম চিকিৎসা করানো হয়নি। তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় উত্তর ২৪ পরগনা জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে। কিন্তু তত ক্ষণে যা দেরি হওয়ার, হয়ে গিয়েছিল। ফলে চিকিৎসা শুরুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সে মারা যায়।

কলকাতার কাছেই দু’টি সরকারি হোমে যক্ষ্মায় পরপর দু’জন আবাসিকের মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতর। ওই দফতর সূত্রের খবর, নিয়ম অনুযায়ী হোমে পাঠানোর আগে কিশোর-কিশোরীর এইচআইভি, থ্যালাসেমিয়া, যক্ষ্মা-সহ বেশ কিছু রোগের পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক। কারণ, সেখানে বাচ্চারা একসঙ্গে থাকে সংক্রামক রোগ অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। তা সত্ত্বেও রাজ্যের কোনও হোমেই শিশু-কিশোরদের পাঠানোর আগে তাদের কোনও রকম চিকিৎসা বা পরীক্ষা করানো হয় না বলে অভিযোগ।

অথচ রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের এক আধিকারিকই জানান, অন্যান্য রাজ্যে হোমে পাঠানোর আগে নিয়ম মেনে ছোটদের যক্ষ্মা, এইচআইভি, থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগের পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলা বেশ পিছিয়ে। অভিযোগ, সুকন্যার মতো সরকারি হোমের চিকিৎসক বাচ্চাদের নিয়মিত পরীক্ষা করতেই রাজি হন না। চোদ্দো বছরের কিশোরীটিরও কোনও চিকিৎসা করেননি তিনি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নেতৃত্বে আসা চিকিৎসকেরদলের কাছে রীতিমতো জোরাজুরি করে কিশোরীর পরীক্ষার ব্যবস্থা করাতে হয় হোম-কর্তৃপক্ষকে।

নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা ওই কিশোরীর মৃত্যুর কারণ জানার পরেই হোম পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু এই বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন