জালে এ বার হাতুড়ে, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীও

শিশু পাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে শনিবার গভীর রাতে ফের দু’জনকে গ্রেফতার করল সিআইডি। এক জন তপনকুমার বিশ্বাস। এই হাতুড়েকে ধরা হয় বর্ধমানের মেমারির আত্মীয়ের বাড়ি থেকে। অন্য জন বাসন্তী চক্রবর্তী। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এই কর্মী ধরা পড়ে দক্ষিণ শহরতলির ঠাকুরপুকুরে ভাইপোর বাড়ি থেকে। দু’জনেই পাচার-কাণ্ডের অন্যতম পাণ্ডা বলে গোয়েন্দাদের দাবি। ধৃত তপন বাংলাদেশেও শিশু পাচার করত, এমন তথ্যও গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে।শিশু পাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে শনিবার গভীর রাতে ফের দু’জনকে গ্রেফতার করল সিআইডি। এক জন তপনকুমার বিশ্বাস। এই হাতুড়েকে ধরা হয় বর্ধমানের মেমারির আত্মীয়ের বাড়ি থেকে। অন্য জন বাসন্তী চক্রবর্তী। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এই কর্মী ধরা পড়ে দক্ষিণ শহরতলির ঠাকুরপুকুরে ভাইপোর বাড়ি থেকে। দু’জনেই পাচার-কাণ্ডের অন্যতম পাণ্ডা বলে গোয়েন্দাদের দাবি। ধৃত তপন বাংলাদেশেও শিশু পাচার করত, এমন তথ্যও গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫৯
Share:

তপনকুমার বিশ্বাস ও বাসন্তী চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র

কে তপন

Advertisement

বছর বিয়াল্লিশের তপনকুমার বিশ্বাস গাইঘাটার বড়া গ্রামের বাসিন্দা। বছর পনেরো আগেও গ্রামের মানুষ তাকে ‘হাতুড়ে’ হিসেবেই চিনতেন। জ্বর-সর্দি-কাশির মতো সাধারণ রোগের চিকিৎসা করত সে। তার আগে স্থানীয় এক চিকিৎসকের সে ব্যাগ বইত, এমন কথাও গ্রামে কান পাতলে শোনা যায়। হঠাৎ করেই সে কী ভাবে ‘বড় ডাক্তার’ হয়ে গেল, ধন্দে রয়েছেন গ্রামবাসী। তাঁরা জানিয়েছেন, বাদুরিয়ার সোহান নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই ঠাটবাট বদলে যায় তপনের। বাড়িতে দু’টি গাড়ি। একটি মোটরবাইক। রয়েছে জমিও। কয়েক বছর আগে নিজের একতলা বাড়ি দোতলা করেন। এ বার দুর্গাপুজোর আগে বাড়ি রং করায়। কয়েক বছর ধরে বাড়িতে দুর্গাপুজোও করছে সে। হত ২১ নভেম্বর সোহান নার্সিংহোম থেকে সদ্যোজাত উদ্ধার এবং শিশু পাচার কাণ্ডের কথা সামনে আসার পর থেকেই পলাতক ছিল তপন। দু’দিন আগে পর্যন্ত তার বাড়ির ফলকে নামের পাশে বর্ধমান ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের লম্বা ডিগ্রি দেখা যাচ্ছিল। রবিবার অবশ্য সেই ফলক দেখা যায়নি। তপনের মা সুধারানিদেবীর দাবি, ‘‘বর্ধমান থেকে সে ডাক্তারি পাশ করেছে। অলটারনেটিভ মেডিসিনের কোর্সও করেছে।’’ যদিও এ সংক্রান্ত কোনও শংসাপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। বাড়িতে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থাও করেছিল তপন। হতো ভ্রুণের লিঙ্গ পরীক্ষাও।

Advertisement

কে বাসন্তী

বছর বাহান্নর বাসন্তী চক্রবর্তী আদতে দক্ষিণ শহরতলির ঠাকুরপুকুরের গ্রিন পার্কের বাসিন্দা। কিন্তু বিধবা ওই মহিলা থাকত ঠাকুরপুকুরে ‘মিলেনিয়াম ওল্ডেজ হোম অ্যান্ড রিহ্যাব সেন্টার’ নামে যে বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে তার একতলায় থাকত। তার ছেলে থাকে দোতলায়। বৃদ্ধাশ্রমটিতে অবশ্য কোনও আবাসিক কোনও দিনই ছিলেন না। এই বৃদ্ধাশ্রমটির কর্ণধার বিমল অধিকারী, ‘পূর্বাশা’ হোমে পাচারের উদ্দেশে শিশু রাখার অভিযোগে শুক্রবার সিআইডি যাকে গ্রেফতার করে। ফলতার দোস্তিপুরের সরকার অনুমোদিত হোমটিরও অন্যতন কর্ণধার বাসন্তী। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, মহাত্মা গাঁধী রোডের শ্রীকৃষ্ণ নার্সিংহোম এবং মছলন্দপুরের ‘সুজিত দত্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এর কর্ণধার সত্যজিৎ সিংহের সঙ্গে শিশু পাচারে জড়িত ছিল বাসন্তী। তার যোগ ছিল বেহালার সাউথ ভিউ নার্সিংহোমের মালকিন পুতুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। সে মূলত বিক্রির জন্য আনা সদ্যোজাতদের দেখভাল করত। ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, বাসন্তী এলাকার বিভিন্ন নার্সিংহোমের সঙ্গে যোগসাজশ করে সে সদ্যোজাত সংগ্রহও করত বলে দাবি গোয়েন্দাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন