মন্দারমণিতে উদ্ধার হল নিখোঁজ দুই যুবকের দেহ। রবিবার ভোরে মন্দারমণির সমুদ্র সৈকতে লোকেশ মেহরোত্রর দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে কাঁথির শৌলার সমুদ্রতট থেকে বিনয় চৌধুরি নামে আরও এক যুবকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপরেই বাড়ির লোকেরা দু’জনের মৃতদেহ শনাক্ত করে।
শনিবার দুপুরে সমুদ্র স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার তিন যুবক। তাঁদের মধ্যে সুমন্ত্র বন্দ্যোপাধ্যায় নামে একজনের দেহ শনিবারই উদ্ধার করেছিল মন্দারমণি উপকূল থানার পুলিশ। দু’জন নিখোঁজ ছিলেন।
কলকাতার রাজারহাটের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার জনা ১২ কর্মী দল বেঁধে গাড়ি নিয়ে শনিবার সকালে মন্দারমণি পৌঁছন। দুপুরে স্নান করতে নেমে সেই দলেরই তিনজন সুমন্ত্র বন্দ্যোপাধ্যায় (৩০), লোকেশ মেহরোত্রা ও বিনয় চৌধুরী তলিয়ে যান। রাজারহাটের বাসিন্দা সুমন্ত্রর দেহ বিকেল পাঁচটা নাগাদ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তবে ডুবুরি নামিয়েও সল্টলেকের বাসিন্দা লোকেশ ও তেঘরিয়ার বিনয়ের কোনও খোঁজ মেলেনি। কাঁথির এসডিপিও ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এ দিন আর অন্ধকারে তল্লাশি চালানো যায়নি। আজ, রবিবার সকাল থেকে ফের তল্লাশি শুরু হবে।
গত ২১ অগস্ট কাকভোরে এই মন্দারমণি সৈকতেই তীব্র গতিতে গাড়ি ছোটাতে গিয়ে অন্য একটি গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল তিন যুবকের। সেটা ছিল রবিবারের সকাল। ঘটনাচক্রে সে দিনের দুর্ঘটনায় মৃত বৈভব রজনীশের বাড়ি নিউটাউনের যে আবাসনে, সেই আবাসনেরই বাসিন্দা সুমন্ত্রবাবু।
গত ২০ মে সৈকতে গাড়ি চালাতে গিয়েও এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। বেশ কয়েকজন আহত হন। তারও আগে সৈকতে প্যারা গ্লাইডিং করতে গিয়ে বাতিস্তম্ভে প্যারাস্যুট জড়িয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক পর্যটকের। একের পর এক দুর্ঘটনা মন্দারমণির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। পর্যটকদের জিজ্ঞাসা, কেন সৈকতে যথাযথ নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে না!
এ দিনের ঘটনার পরে অবশ্য পুলিশের দাবি, মদ্যপ অবস্থায় সমুদ্রে নেমেই ডুবে গিয়েছেন ওই তিন যুবক। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার বক্তব্য, ‘‘সকলেই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। তার মধ্যে চারজন জলের তোড়ে ভেসে যান। ওয়াচ টাওয়ারে থেকে দেখে নুলিয়া নামিয়ে একজনকে পাড়ে এনে বাঁচানো গিয়েছে। কিন্তু বাকিদের আর কিছু করা যায়নি।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মন্দারমণি সৈকতের কাছেই একটি রিসর্টে উঠেছিলেন সুমন্ত্ররা। দুপুর একটা নাগাদ খাওয়া-দাওয়ার পর সুমন্ত্র, লোকেশ, বিনয়–সহ আট জন সমুদ্রে নামেন। কিন্তু স্নান করতে করতে হঠাৎই সুমন্ত্র, লোকেশ, বিনয়-সহ চারজন বাকিদের থেকে অনেকটা দূরে চলে যান। তারপর একজনকে ফেরানো গেলেও সুমন্ত্ররা তিনজন সঙ্গীদের চোখের সামনেই ভেসে যান।
ঘটনার সময় সৈকতে জাল বুনছিলেন মৎস্যজীবী কার্তিক খুটিয়া আর ইনসার খাঁ। তাঁদের কথায়, ‘‘ওঁদের আমরা চেঁচিয়ে অত দূরে যেতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু ওরা হেসে উড়িয়ে দেয়। পরে চিৎকার শুনে গিয়ে শুধু একজনের দু’টো হাত জলের উপরে দেখতে পাই।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, মিনিট পনেরোর মধ্যেই পুলিশ আসে। দু’টো স্পিডবোট এনে শুরু হয় তল্লাশি। পরে সুমন্ত্রর দেহ মেলে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ওই তিন যুবকের পরিজনেরা মন্দারমণি রওনা দিয়েছেন। বিনয়ের বাবা সন্তোষ চৌধুরী ফোনে বললেন, ‘‘পুলিশই খবরটা দিল। বিনয় আমার বড় ছেলে। মাসখানেক আগে ছোট ছেলেটাকেও হারিয়েছি। জানি না ওখানে গিয়ে কী দেখব।’’