হস্তক্ষেপ-মুক্ত শিক্ষাই চান ইউজিসির প্রধান

বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইরের নিয়ন্ত্রণ কখনওই কাম্য নয় বলে জানিয়ে দিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর চেয়ারম্যান বেদ প্রকাশ। ‘‘বিশ্ব-মানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাইরের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখতেই হবে,’’ সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন ইউজিসি-প্রধান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫২
Share:

যাদবপুরে বেদ প্রকাশ। পিছনে বিক্ষোভ এসএফআইয়ের। সোমবার।নিজস্ব চিত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইরের নিয়ন্ত্রণ কখনওই কাম্য নয় বলে জানিয়ে দিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর চেয়ারম্যান বেদ প্রকাশ। ‘‘বিশ্ব-মানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাইরের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখতেই হবে,’’ সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন ইউজিসি-প্রধান।

Advertisement

শিক্ষা শিবিরের মতে, এই রাজ্যে যখন উচ্চশিক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে জোরদার বিতর্ক চলছে, ঠিক সেই সময়েই কলকাতায় দাঁড়িয়ে ইউজিসি-প্রধানের এই বক্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতবহ। যদিও ‘বাইরের নিয়ন্ত্রণ’ বলতে তিনি ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন, তাঁর ব্যাখ্যা দেননি বেদ।

বিশ্ব-মানের নিরিখে এই মুহূর্তে এ দেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রথম একশোয় নেই। বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ব-মানে টেনে তুলতে কী কী প্রয়োজন, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইউজিসি-র চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘বাইরের হস্তক্ষেপ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে মুক্ত হতেই হবে। যাঁকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হবে, তাঁকে জানাতে হবে পূর্ণ সমর্থন।’’ তাঁর পর্যবেক্ষণ, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেন, প্রথম ছ’মাস তাঁর মধুচন্দ্রিমা পর্ব চলে। কিন্তু কিছু দিন পরে দেখা যায়, তাঁকে প্রচুর চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। এ দেশে সেই চাপ যে মাত্রাছাড়া এবং সেই চাপ যে আসে মূলত আমলাতান্ত্রিক মহল থেকে, তা-ও গোপন করেননি ইউজিসি-র চেয়ারম্যান।

Advertisement

শিক্ষা মহলের একাংশের বক্তব্য, ইউজিসি-প্রধান যা বললেন, সেটা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘টাকা দিই তাই হস্তক্ষেপ করব’ মন্তব্যের ঠিক উল্টো। বিধানসভায় শিক্ষা বিল পাশ করিয়ে উচ্চশিক্ষার সবটুকু স্বাধিকার হরণ করা হয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। শিক্ষামন্ত্রীর যুক্তি, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলি চলে সরকারের দেওয়া অর্থে৷ সেই অর্থ জনসাধারণের৷ সরকার তাই সেই অর্থের হিসেব নিতে দায়বদ্ধ। একে স্বাধিকার হরণ বলে না। ইউজিসি-প্রধানের বক্তব্যের ব্যাপারে তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

বিশ্ব-মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ‘টিউশন ফি’ বাড়ানোর পক্ষেও সওয়াল করেন বেদ প্রকাশ। তিনি জানান, যে-সব ছাত্রছাত্রীর আর্থিক অবস্থা খারাপ, তাঁদের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা থাকতে পারে। তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে তা সম্ভব নয়। পাশে বসা যাদবপুরের উপাচার্যকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সুরঞ্জন (দাস) কি পারবেন? করতে গেলেই তো রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের স্বার্থে তা করতে দেবেন না! পড়ুয়ারাও তা চাইবে না।’’

বিশ্ব-মানের বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে গেলে তার পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী করা এবং গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়া খুবই জরুরি বলে বারবার মনে করিয়ে দেন ইউজিসি-র চেয়ারম্যান। যাদবপুর বিশ্ববিধ্যালয়ের ৬০ বছর উপলক্ষে ৩৪ জন বিশিষ্ট প্রাক্তনীকে এ দিন সম্মান জানানো হয়। সম্মান প্রাপকদের মধ্যে ছিলেন স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য, চিত্র-পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। আর ছিলেন শতায়ু অমিয়কুমার চট্টোপাধ্যায়। ১৯১৪ সালে তাঁর জন্ম। বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির আগে যাদবপুরে ছিল জাতীয় শিক্ষা পর্ষদ। অমিয়বাবু ছিলেন সেখানকার ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। তাঁকে এ দিন সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

উপাচার্য সুরঞ্জনবাবু অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘যাদবপুরের পড়ুয়ারা শুধু লেখাপড়াতেই উৎকর্ষ দেখায় না। ঠিক সময়ে ঠিক প্রশ্নও তোলে। তাতে অনেকে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। কিন্তু এটাই যাদবপুরের গণতন্ত্র।’’ অনুষ্ঠানের শেষে প্রেক্ষাগৃহের বাইরে ইউজিসির নন-নেট ফেলোশিপ বন্ধ করার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের সামনে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই। পরে সুরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘এই ঘটনা অবাঞ্ছিত। পড়ুয়ারা এই ভাবে বিক্ষোভ না-দেখিয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে স্মারকলিপি দিতে পারত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন