অনড় বাবুল, আসরে জিতেন্দ্র

এক দিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনড়, তাঁর গাড়ি পিছনে যাবে না। অন্য দিকে বিক্ষোভকারীরাও তাঁকে কোনও ভাবে সামনে যেতে দেবেন না। ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয়েছেন পুলিশকর্তারা। কিন্তু তাঁরাও কোনও উপায় বের করতে পারছেন না।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৪
Share:

বাবুলের গাড়ি বের করার চেষ্টায় মেয়র। —শৈলেন সরকার

এক দিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনড়, তাঁর গাড়ি পিছনে যাবে না। অন্য দিকে বিক্ষোভকারীরাও তাঁকে কোনও ভাবে সামনে যেতে দেবেন না। ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয়েছেন পুলিশকর্তারা। কিন্তু তাঁরাও কোনও উপায় বের করতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে বুধবার আসানসোলের বিএনআর মোড়ে সমাধানসূত্র বের করলেন শহরের তৃণমূল মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বিক্ষোভকারী দলীয় কর্মীদের বুঝিয়ে বের করলেন বিজেপি সাংসদ তথা মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের গাড়ি।

Advertisement

শহরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের বাড়ি ঘেরাওয়ের বিজেপি-র কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ দিন দুপুর থেকে গোলমাল পাকে আসানসোল শহর জুড়ে। তৃণমূলের দাবি, বিজেপি কর্মীরা উস্কানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেন। শহরের নানা জায়গায় দলের কর্মীদের মারধর করা হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ বিজেপির। ভাঙচুর হয় দীপ্তাংশু চৌধুরী-সহ বিজেপির বেশ কিছু নেতা-কর্মীর গাড়ি। ঘটনার প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার ১২ ঘণ্টা আসানসোল বন্‌ধের ডাক দিয়েছে বিজেপি।

বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে দক্ষিণ পুলিশ ফাঁড়িতে যাওয়ার জন্য মহিশীলার বাড়ি থেকে বেরোন বাবুল। সেই খবর পেয়েই বিএনআর মোড়ে জড়ো হয় তৃণমূলের কয়েকশো লোক। আটকে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয়। নিরাপত্তারক্ষীর বারণ সত্ত্বেও গাড়ি থেকে বেরোন বাবুল। তখনই তাঁর দিতে ইট উড়ে আসে। তৈরি হয় অশান্তির পরিস্থিতি।

Advertisement

পুলিশের কর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাবুলকে গাড়ি ঘুরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি তা শুনতে চাননি। বিক্ষোভকারীরাও রাস্তা থেকে সরতে নারাজ। সওয়া ৪টে নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন মেয়র জিতেন্দ্রবাবু। তাঁকে দেখে সাংসদকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনাদের কর্মীরা কী ভাবে আমার কনভয় আটকেছে দেখুন।’’ মেয়র বলেন, ‘‘উত্তেজিত হবেন না। আমি গাড়ি বের করার ব্যবস্থা করছি।’’ এর পরে তিনি রাস্তা অবরোধ করে রাখা তৃণমূলের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের সরে যেতে বলেন। গাড়ি বেরোনোর সময়ে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে জন্য বাবুলকে ডেপুটি মেয়র তবসসুম আরাকে গাড়িতে নিতে বলেন জিতেন্দ্রবাবু। সাংসদ তা মেনে নেন। প্রায় চল্লিশ মিনিট পরে জট কাটে। বেরিয়ে যায় সাংসদের গাড়ি।

পুলিশ লাইনের সামনে গাড়ি ভাঙচুর।

বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

পরে অবশ্য জিতেন্দ্রবাবু দাবি করেন, ‘‘বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলে জানতে পারি। ওদের একটি গোষ্ঠী বাবুলকে যেতে বাধা দিচ্ছিল। অন্য গোষ্ঠী তাঁকে নিয়ে যেতে চাইছিল। আমাদের দলের কেউ বাধা দেননি বা ইট ছোড়েননি।’’ যদিও বিক্ষোভকারীদের এ দিন নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে শহরের তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলামকে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘যখনই সাংসদ আসেন, একটা না একটা গোলমাল পাকিয়ে যান। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি।’’ তবে ইট ছোড়ার কথা মানতে চাননি তিনিও।

বাবুলের গাড়ি বের করতে তিনি উদ্যোগী হলেন কেন? মেয়রের ব্যাখ্যা, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গাড়ি আটকে ছিল। শহরের মেয়র হিসেবে আমার মনে হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যাওয়া উচিত। তাই গিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি।’’ যদিও মেয়র ‘বাধ্য হয়ে’ই আসরে নেমেছেন বলে দাবি করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের আসানসোলের নেতা বিবেকানন্দ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘তৃণমূলের লোকজন উচ্ছৃঙ্খল ভাবে মন্ত্রীর গাড়ি আটকে রেখেছিল। সাধারণ মানুষ তা ভাল ভাবে নেননি। এর ফলে জি়টি রোডও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। জনমত বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে বুঝেই তড়িঘড়ি আসরে নামতে বাধ্য হয়েছেন মেয়র।’’

বাবুল ও বিতর্ক

মার্চ, ২০১৪: লোকসভা ভোটে প্রার্থী হয়ে মদ্যপ অবস্থায় প্রচারে বেরনোর অভিযোগ বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে। পরে যদিও তা খারিজ হয়ে যায়।

এপ্রিল ২০১৪: রানিগঞ্জে প্রচারে গিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে গোলমাল। অস্ত্র আইনে মামলা বাবুলের বিরুদ্ধে। পরে সেই ধারা বাদ যায়।

জানুয়ারি ২০১৫: রানিগঞ্জের স্কুলে ডাস্টবিন দিতে গেলে বাবুলকে বাধার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

অগস্ট ২০১৫: কর্তৃপক্ষ সম্মতি না দিলেও আসানসোলের ইএসআই হাসপাতালে সম্প্রসারণ প্রকল্পের শিলান্যাস বাবুলের।

জানুয়ারি ২০১৬: তৃণমূলের জন্মজয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানে মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির উপস্থিতিতে মঞ্চে উঠে গান গাইলেন বাবুল।

সেপ্টেম্বর ২০১৬: তাঁর তহবিলের টাকায় তৈরি রাস্তায় পুরসভার বোর্ড দেখে ক্ষোভ বাবুলের। উপড়ে ফেলা হল সেই বোর্ড।

অক্টোবর ২০১৬: মন্ত্রী মলয় ঘটকের বাড়ির সামনে বিজেপির বিক্ষোভ ঘিরে শহরে অশান্তি। বিক্ষোভের মুখে বাবুল। বুকে লাগল ইটের ঘা-ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন