নম্বর নিয়ে আপসে নারাজ অধ্যক্ষেরা

এ বারও হয়ত ছেড়ে দেওয়া যেত, কিন্তু নতুন ‘চয়েজ বেসড ক্রেডিট সিস্টেম’ (সিবিসিএস)-এ ক্লাস না করা পড়ুয়াদের ছাড়তে গেলে ক্লাস করা পড়ুয়াদের সঙ্গে অন্যায় করা হবে। আর এই জটেই আটকে রয়েছে ‘হাজিরা সমঝোতা’। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

নতুন নিয়মে এই নম্বর লিখে পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় ক্লাসে নিয়মিত হাজির থাকলে। আর হাজিরা-জটে আটকে যাওয়া ছাত্রদের একটাই অনুরোধ, ওই নম্বর চাই না, শুধু পরীক্ষায় বসতে দিন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাড়তি সময় দেওয়ায় এই অনুরোধেই এখন জেরবার হচ্ছেন কলেজ অধ্যক্ষদের বড় অংশ। শিক্ষা দফতর এবং খোদ শিক্ষামন্ত্রীর কড়া নির্দেশের পরে অধ্যক্ষেরা বলছেন, এ বারও হয়ত ছেড়ে দেওয়া যেত, কিন্তু নতুন ‘চয়েজ বেসড ক্রেডিট সিস্টেম’ (সিবিসিএস)-এ ক্লাস না করা পড়ুয়াদের ছাড়তে গেলে ক্লাস করা পড়ুয়াদের সঙ্গে অন্যায় করা হবে। আর এই জটেই আটকে রয়েছে ‘হাজিরা সমঝোতা’।

Advertisement

নতুন সিবিসিএস ব্যবস্থায়, প্রতি সেমেস্টারে ১০০ নম্বরের মধ্যে ১০ নম্বর থাকে হাজিরা এবং ১০ নম্বর ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্ট বাবদ। নিয়ম অনুযায়ী, ন্যূনতম ৬০ শতাংশ হাজিরা থাকতেই হবে এবং সেটা থাকলে ওই পড়ুয়া ৬ নম্বর পাবেন। ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ হাজিরার জন্য মিলবে ৮ নম্বর। ৯০ শতাংশের বেশি হাজিরা হলে পাওয়া যায় ১০-এ ১০। চলতি শিক্ষাবর্ষে দেখা গিয়েছে, পরীক্ষায় বসার দাবিতে বিক্ষোভের সময় পড়ুয়ারা বলছেন, ৬ নম্বর লাগবে না, ৬০ শতাংশ হাজিরা করে দিয়ে পরীক্ষায় বসতে দিন। কিন্তু শিক্ষকেরা বলছেন, সেটা করতে গেলে এমনিতেই ওই ছাত্র ক্লাস না করেও বাড়তি ছয় নম্বর নিয়ে পরীক্ষায় বসবেন। আর সেটাই অন্যায়।

সম্প্রতি এই দাবি নিয়েই তুমুল ছাত্র বিক্ষোভ হয় দক্ষিণ কলকাতার হেরম্বচন্দ্র কলেজে। সেখানকার অধ্যক্ষ নবনীতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অন্যান্য বার শেষ পর্যন্ত একটা ব্যবস্থা হয়। তবে এ বার সেই ব্যবস্থা করতে গেলে হাজিরা না থাকা পড়ুয়াকে পরীক্ষায় বসাতে গেলে অন্যায় ভাবে বাড়তি নম্বর দিতে হবে। সেটা করার প্রশ্নই নেই।’’ সূর্য সেন স্ট্রিটের সিটি কলেজ অব কমার্স অ্যান্ড বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধ্যক্ষ সন্দীপকুমার পাল রাতভর ঘেরাও থাকার পরে বলেন, ‘‘যিনি কলেজেই আসেননি, যাঁর উপস্থিতির হার শূন্য, তাঁকে ৬ নম্বর দেব কী করে।’’

Advertisement

একই কথা বলছেন জয়পুরিয়া কলেজের সান্ধ্য বিভাগের টিচার ইন চার্জ অনিল কুমার সাহা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পড়ুয়াদের বারবার বলেও তাঁরা ক্লাসে আসেন না। বহু বার সাবধান করা হয়েছে। এখন পরীক্ষায় বসতে চান। তা হয় না।’’ প্রসঙ্গত, হাজিরা না থাকায় ক’দিন আগেই এই কলেজের টিচার্স রুম থেকে ‘অ্যাটেন্ডেন্স’ খাতা লুট করার অভিযোগ উঠেছে। বেহালার সরশুনা কলেজের অধ্যক্ষ শুভঙ্কর ত্রিপাঠী পড়ুয়াদের হাজিরা খাতা দেখিয়ে নিষ্কৃতি পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অন্যান্য বার চাপের মুখে সমঝোতা করতে হয়। নম্বর না থাকলে এ বারও তাই করতে হত।’’

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নম্বর পাইয়ে দেওয়া অপরাধ। আমরা একে সমর্থন করি না। তা ছাড়া কোনও একটা জায়গায় কড়া হতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন