সংঘর্ষ: বাম সমর্থকদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ। সোমবার বারাসতে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
একের পর এক ভোটে দ্বিতীয় স্থানও খোয়াতে হয়েছে। রাজ্যে বিরোধী পরিসরে দ্রুত উঠে আসছে বিজেপি। এই আবহে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ যখন কলকাতায়, সেই সময়ে জেলায় জেলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল বামেদের ধর্না-বিক্ষোভ। অন্তত তিন জেলায় পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধল আন্দোলনকারীদের। পুলিশের মারে জখম হলেন বেশ কিছু বাম নেতা-কর্মী। পুলিশি আক্রমণের প্রতিবাদ করে আবার পথে নেমে ধিক্কারের ডাক দিয়েছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
ফসলের ন্যায্য দাম, অর্থলগ্নি সংস্থায় প্রতারিতদের টাকা ফেরত-সহ ২৭ দফা দাবিতে জেলাশাসকদের দফতরে ধর্নার কর্মসূচি ছিল বামেদের। সেই কর্মসূচি ঘিরেই সোমবার গোলমাল বাধে উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার মতো কিছু জেলায়। পুলিশের অভিযোগ, মারমুখী বাম সমর্থকদের ঠেকাতে গিয়েই সংঘর্ষ হয়েছে। বামেদের পাল্টা অভিযোগ, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হওয়া সত্ত্বেও কিছু জেলায় দাবিপত্র নেওয়ার জন্য জেলাশাসক দফতরে ছিলেন না। প্রতিবাদ করতে গেলে পুলিশ তাদের উপরে আক্রমণ চালিয়েছে। ঘটনাপ্রবাহ দেখে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, বিজেপি-র বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ-প্রশাসনই কি বামেদের পিটিয়ে তাদের অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করল? যা আবার পত্রপাঠ নস্যাৎ করে দিচ্ছেন বাম নেতারা। এক দিকে যখন বাম-পুলিশ সংঘর্ষ, অন্য দিকে তখন বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তিতে রাজ্য জু়ড়ে ১৫০০ বাইক মিছিল করেছে গেরুয়া শিবিরের নানা সংগঠন।
বামেদের কর্মসূচি ঘিরে এ দিন সব চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়েছে বারাসত। দফায় দফায় ইটবৃষ্টি, বোমাবাজি, পুলিশের লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেটের ঘায়ে আহত হয়েছেন কয়েকশো সাধারণ মানুষ ও পুলিশকর্মী। আহতদের বারাসত জেলা হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি করা হয়েছে। রাস্তা ও ট্রেন অবরোধের জেরে নাকাল হয়েছেন মানুষ। পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার সময়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মধ্যেই কয়েকটি বোমা এসে ফাটে। লাঠি চালানো শুরু করে পুলিশ। পাল্টা ইট-পাটকেল ছোড়েন সমর্থকেরা। পুলিশ পরপর কাঁদানে গ্যাসের সেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। জখম হয়েছেন সিপিএমের গার্গী চট্টোপাধ্যায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা বিশ্বাসেরা।
আরও পড়ুন: ধর্মগুরুর নির্দেশে বন্ধে অনড় গুরুঙ্গ
রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল তমলুকে জেলাশাসকের দফতরও। জেলাশাসক রশ্মি কমলের অভিযোগ, বিক্ষোভ দেখাতে এসে ২৮টি গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। ভাঙা হয়েছে দফতরের জানলার কাচ। পুলিশের উপরেও হামলার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। ঘটনার জেরে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি, সিটু-র জেলা সম্পাদক সুব্রত পণ্ডা-সহ ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি সম্পত্তির হিসেব করা হচ্ছে। বাঁকুড়াতেও বাম কর্মীরা পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশের মারে গুরুতর চোট পেয়েছেন ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভয় মুখোপাধ্যায়-সহ বেশ কয়েক জন।
রাজ্যের সর্বত্র প্রতিবাদের ডাক দিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জেনে রাখুন, মানুষ যখন পথে নেমেছে, তখন তাঁদের এ ভাবে আক্রমণ করে দমন করা যাবে না! মানুষ আরও বড় আন্দোলনের জন্য তৈরি হচ্ছে।’’