শিশু ও প্রসূতিদের পুষ্টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের কাঁধে। অথচ অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পে যুক্ত অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাই সেই কাজ ঠিকমতো করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। নালিশ শুধু সাধারণ মানুষের নয়। পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে অন্তত ছ’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাদের বরখাস্ত করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন সেখানকার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য।
সরকারের কাছে পাঠানো বিশেষ রিপোর্টে ওই জেলাশাসক জানিয়েছেন, অনিয়মের জন্যই জেলার অন্তত ছ’টি ব্লকে কেন্দ্রীয় সরকারের সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্প (আইসিডিএস) বা অঙ্গনওয়াড়ির কাজ ঠিকমতো চলছে না। তাই তাদের বরখাস্ত করে সরকারই সেখানকার দায়িত্ব নিক। নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের এক কর্তা জানান, এই বিষয়ে জেলাশাসককেই তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এর আগে যে-সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।’’ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, জেলাশাসকের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নবান্নের খবর, অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পে অভিযোগ এই প্রথম নয়। কয়েক বছর ধরে একাধিক সংস্থার বিরুদ্ধে তছরুপ, চাকরি দেওয়ার নামে কর্মপ্রার্থী মহিলাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, নিয়মবিধি না-মানার মতো অভিযোগ উঠছে। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, সরকারের একার পক্ষে সারা রাজ্যে অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্প চালানো সম্ভব নয়। তাই অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ এলেও অনেক ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হল শিশু ও প্রসূতি মায়েদের পুষ্টি সুনিশ্চিত করে তাঁদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া। এই প্রকল্পে টাকা দেয় কেন্দ্র। তাদের টাকায় কর্মী ও সহায়িকা নিয়োগ করে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। তবে কোথাও সরকার নিজেরাই সেই কাজ করে, কোথাও কাজটা করানো হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়ে। পূর্ব মেদিনীপুরে যে-সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই প্রকল্প চালায়, তাদেরই কয়েকটির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন খোদ জেলাশাসক।
অভিযোগ ঠিক কী ধরনের?
জেলাশাসক লিখেছেন: স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে যে-উদ্দেশ্যে অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা পূরণ হচ্ছে না। কারণ, কোনও কাজই হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলির কাজের মান খুবই খারাপ। শিশু-প্রসূতিদের পুষ্টি বিধানের কাজে তাদের বিশেষ নজর নেই। বরং তারা অনেক বেশি আগ্রহী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সহায়ক ও সুপারভাইজার নিয়োগ নিয়ে। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আবার স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি বা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক সরকারি কর্তাদের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগই রাখে না। নিজেদের মতো করে প্রকল্প চালায়। এই অবস্থায় অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে সরিয়ে দিয়ে সরকারকেই প্রকল্পের কাজ চালানোর দায়িত্ব হাতে তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন জেলাশাসক। অন্তরাদেবী অবশ্য এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির অনেকেই ঠিকঠাক কাজ করছে না বলে স্বীকার করে নিয়েছেন মন্ত্রী শশীদেবী। তিনি বলেন, ‘‘সম্প্রতি আমি বেশ কয়েকটি অ-সরকারি সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে বলেছি, ভাল ভাবে কাজ না-করলে সরকারই দায়িত্ব নেবে।’’ তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রের নির্দেশেই অ-সরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দিতে হয়। অনেকে ভাল কাজ করে। কিন্তু সকলেই যে ঠিকমতো কাজ করে, তা নয়।
অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির অনেকেই অবশ্য জেলাশাসকের অভিযোগ মানতে রাজি নয়। যেমন, মহিষাদল-২ ব্লকে অভিযুক্ত এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা দুলাল সামন্ত প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘নিয়ম না-মানলে সরকার অর্থ দিচ্ছে কেন?’’ যে-স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্প চালায়, তাদের কর্তা আশিস লাহিড়ী অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, তাঁরা প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেই কাজ করছেন।