শূন্য পদ ‘গায়েব’ কোন জাদুতে, উঠছে প্রশ্ন  

‘ভ্যানিশ’ হয়ে গিয়েছে শিক্ষকদের বহু শূন্য পদ!

Advertisement

কলকাতা

সুব্রত বসু শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৪
Share:

ঘটনার দিন দাড়িভিট স্কুল। ফাইল স্কুল।

‘ভ্যানিশ’ হয়ে গিয়েছে শিক্ষকদের বহু শূন্য পদ!

Advertisement

উত্তর দিনাজপুরের স্কুলগুলিতে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ১৫৩টি শূন্যপদে ৫৯৪ জন নিয়োগ যদি মহাবিভ্রাট পর্বের এক পিঠ হয়, তবে এর উল্টো পিঠে রয়েছে জেলার বিভিন্ন স্কুলের শূন্য পদ গায়েব হয়ে যাওয়া। এই ‘ভ্যানিশ-ম্যাজিক’-এর শিকার ইসলামপুরের দাড়িভিট হাইস্কুলও।

উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, চাকুলিয়ার শকুন্তলা হাইস্কুলের কথা। ১৯০০ ছাত্রের এই স্কুলে শিক্ষকদের ২৭টি পদ শূন্য। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়ম মেনে ২৬টি পদে নিয়োগের আবেদন করা হয়। কিন্তু দিন দশেক আগে জানা যায়, স্কুলের ২৩টি শূন্য পদ উধাও। মাত্র তিন জন শিক্ষকের শূন্য পদ রয়েছে। তার মধ্যে একটি পদে নিয়োগ হয়েছে সোমবার। গায়েব হওয়া শূন্য পদ ফিরিয়ে দিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ এখন ছোটাছুটি করছেন জেলা শিক্ষা দফতরে। প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষাকর্তাদের ‘হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে’ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার ‘আর্জি’ জানাচ্ছেন স্কুলের টিচার ইনচার্জ।

Advertisement

একই ম্যাজিকে রায়গঞ্জের ভগীলতা হাইস্কুলের ১৬টি শূন্যপদ গায়েব হয়েছে। স্কুলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২৪০০ ছাত্রের এই স্কুলে শূন্য পদের সংখ্যা ১৯। স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে তাদের শূন্য পদ দেখানো হচ্ছে মাত্র ৩। এই তিন শিক্ষক দিয়ে কী করে ১৬ জনের কাজ চালাবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না স্কুলের পরিচালকেরা।

দাড়িভিট স্কুলের বিক্ষোভকারী ১৯৩০ জন পড়ুয়ার দাবি ছিল, বাংলা, ভূগোল ও ইতিহাসের শিক্ষক আগে দরকার। তা না পাঠিয়ে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পাঠানো হয়েছে উর্দু ও সংস্কৃতের দুই শিক্ষককে। ওই স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ওই পদ দু’টিই নেই।

আনন্দবাজারের অন্তর্তদন্তে সামনে এসেছে, দাড়িভিট হাইস্কুলে মোট শূন্যপদ ২১টি। এই পদগুলিতে নিয়োগের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ উত্তর দিনাজপুরের স্কুল পরিদর্শকের দফতরের নিয়ম মেনে আবেদন করেছেন। কিন্তু তাদের ১৬টি পদ ‘ভ্যানিশ’। এসএসসি-র ওয়েবসাইটে দেখানো হয়েছে, ওই স্কুলে মাত্র ৫টি শূন্য পদ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দফায় নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে উর্দু ও সংস্কৃত শিক্ষকের পদের জন্য।

দাড়িভিট হাইস্কুলের শূন্য শিক্ষকপদ স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে নেই দেখে প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ কুণ্ডু গত ১৩ জুলাই তড়িঘড়ি জেলা পরিদর্শককে ই-মেল করেছিলেন। তাতে তিনি লেখেন, ২০১২ থেকে তাঁরা এই শূন্যপদের কথা বার বার জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু সেই শূন্যপদ সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে নেই। কিন্তু এই চিঠির পরেও নড়ে বসেননি কেউই। দাড়িভিট স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, যে স্কুলের ২১টি পদ দীর্ঘদিন খালি, সেখানে ছাত্রছাত্রীদের কী ভাবে পড়ানো হচ্ছে তা ঈশ্বরই জানেন। এই পরিস্থিতিতে ছাত্রেরা বিক্ষোভ করবে না?’’

কিন্তু স্কুল কেন আরও আগে জানল না, তাদের দেওয়া শূন্য পদ গায়েব হয়ে গিয়েছে?

জবাব দিয়েছেন জেলা শিক্ষা দফতরের এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘এই তালিকা স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছিল ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। নিয়ম অনুযায়ী, শূন্যপদের যে তালিকা সার্ভিস কমিশনে পাঠানো হবে, তার প্রতিলিপি দিতে হবে সংশ্লিষ্ট স্কুলকেও। কিন্তু কেন সেই
প্রতিলিপি স্কুলকে দেওয়া হয়নি, সেটাই মস্ত ধোঁয়াশা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন