ক্ষমতায় এসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কমিটির নির্বাচন সংক্রান্ত আইনের ধারার কিছু পরিবর্তন করেছিল তৃণমূল সরকার। তার পরে নিয়ম মেনে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই সংশোধিত বিধি (স্ট্যাটিউট) পাঠিয়ে দেয় উচ্চশিক্ষা দফতরে। কিন্তু উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, কয়েক বছর ধরেই সেই বিধি ধামা চাপা পড়ে রয়েছে! ফলে স্থগিত হয়ে রয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি গুলির নির্বাচন প্রক্রিয়া। কর্মসমিতি হোক বা কোর্ট— সব ক্ষেত্রেই পদাধিকার বলে থাকা এবং মনোনীত সদস্য নিয়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ। বিষয়টি তৃণমূলের পরিকল্পিত বলে মনে করে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন।
উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, দফতরের আইন বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো ওই বিধি খতিয়ে দেখে রাজ্যপালের কাছে পাঠায়। তার পরে রাজভবন থেকে উচ্চশিক্ষা দফতরের মাধ্যমেই তা ফেরত যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটছে। কয়েক বছর পার হলেও শিক্ষা দফতর থেকে ওই বিধি রাজভবনে পৌঁছয়নি বলেই জানান দফতরের ওই কর্তা।
কিন্তু কেন? দফতর সূত্রের খবর, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মডেল বিধি প্রয়োজন। সেটারই পরিকল্পনা রয়েছে।’’ কিন্তু কী ভাবে তা হবে, নিয়ে সংশয়ে খোদ শিক্ষা দফতরের কর্তারাই।
অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (আবুটা)-র সভাপতি তথা বিধায়ক তরুণ নস্কর বলেন, ‘‘মডেল বিধি বলে কিছু হয় না। মডেল বিধির নামে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধিত স্বাধীন বিধি চেপে রাখা হচ্ছে। কারণ, সরকারের আশঙ্কা, নির্বাচন হলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের অনুগামীদের হার হতে পারে।’’
একই অভিযোগ শিক্ষক সংগঠন ওয়বকুটা-র। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, ‘‘নিজেরই তৈরি আইন বাস্তবায়নের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার! ইচ্ছাকৃত ভাবেই নির্বাচনকে আটকে দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো বিধি ধামা চাপা দিয়ে রেখেছে সরকার। বার বার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার নষ্ট করছে।’’এই ইস্যুতে নভেম্বর মাস থেকে বড় আন্দোলন হবে।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধিত বিধি উচ্চশিক্ষা দফতরে জমা পড়েছে ২০১৪-র আগস্টে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় জমা দিয়েছে ২০১৩ সালে। কিন্তু কোনওটিরই উত্তর মেলেনি। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘কমিটিগুলিতে সকলেই হয় পদাধিকার বলে, না হয় মনোনীত সদস্য। ফলে সহজেই সরকারের নাক গলানোর সুযোগ থেকে যাচ্ছে।’’ ওই শিক্ষকের প্রশ্ন, ‘‘একের পর এক নির্বাচনে জয় লাভ করছে তৃণমূল। তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনে এত ভয় কেন?’’
এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। তাঁর কথায়, ‘‘সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রেই তৃণমূলের সমর্থক বাড়লেও শিক্ষকদের মধ্যে এখনও শাসক দলের জনপ্রিয়তা তেমন বাড়েনি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কমিটির জন্য নির্বাচন হলে শাসক দলের সাফল্যের সম্ভাবনা কম। সেটা বুঝেই ব্যাপারটা এড়িয়ে থাকছে তৃণমূল সরকার।’’ কিন্তু এর জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজকর্মে অনেক অসুবিধা হচ্ছে বলে মন্তব্য ওই শিক্ষকের।