হাসপাতালে জমা জল, দ্বন্দ্ব প্রশাসনে

প্রতি সপ্তাহেই পুরসভার মশা দমনের র‌্যাপিড অ্যাকশন টিম শহরে ঘুরছে। দিন কয়েক আগে এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে দলের সদস্যদের নজরে পড়ে, নির্মাণকাজ চলছে বিভিন্ন জায়গায়

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০২:১৭
Share:

এ ভাবেই জল জমে রয়েছে এসএসকেএম চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

সচেতনতায় ডাহা ফেল এসএসকেএম!

Advertisement

যত্রতত্র জল জমিয়ে মশার ডিম পাড়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করলে এক লক্ষ টাকা জরিমানার বিল সম্প্রতি বিধানসভায় পাশ করিয়েছে রাজ্য সরকার। কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের আশা ছিল, কড়া এই দাওয়াইয়ের জেরে বাড়িতে বাড়িতে জল জমিয়ে রাখার প্রবণতা কমবে। জল জমিয়ে রাখা নিয়ে পুরসভার মূল অভিযোগ ছিল বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে।

কিন্তু রাজ্যের মানুষকে জোর করে অভ্যাস বদলানোর এই প্রয়াসে খোদ স্বাস্থ্য দফতরকেই সঙ্গে পাচ্ছে না পুর প্রশাসন। স্বাস্থ্য দফতরের অধীন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম পুরসভার প্রয়াসকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে। সম্প্রতি ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে জমা জলের বহর দেখে উদ্বিগ্ন পুরভার পতঙ্গবিদেরা। তাঁদের মন্তব্য, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরই যদি সচেতন না হয়, তা হলে সাধারণ মানুষকে আমরা কী শেখাব!’’

Advertisement

এ বছর শহরে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা নিয়ে চিন্তিত পুর কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা সহ রাজ্যের একাধিক পুরসভার কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বিশেষ করে ডেঙ্গি দমনে আগেভাগে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতর এবং পুর প্রশাসনকে। পাশাপাশি, কলকাতা পুরসভার আবেদনক্রমে ডেঙ্গি দমনে বর্তমান আইন সংশোধন করে কড়া দাওয়াইয়ের ব্যবস্থাও করেছেন। তা-ও এসএসকেএমের মতো হাসপাতালে জল জমানোর প্রবণতা হল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে।

প্রতি সপ্তাহেই পুরসভার মশা দমনের র‌্যাপিড অ্যাকশন টিম শহরে ঘুরছে। দিন কয়েক আগে এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে দলের সদস্যদের নজরে পড়ে, নির্মাণকাজ চলছে বিভিন্ন জায়গায়। নতুন করে একটি নর্দমা তৈরি হচ্ছে, যা জলে ভর্তি। তা ছাড়া, আরও একাধিক জায়গায় জল জমে রয়েছে। পড়ে রয়েছে আবর্জনাও।

হাসপাতালের অধিকর্তা অজয়কুমার রায় বলেন, ‘‘নির্মীয়মাণ এলাকাগুলিতে জল জমে ঠিকই। তবে সেই জল সরানোর দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। হাসপাতালের তরফে বছরভর সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। ছড়ানো হয় মশা মারার ওষুধ ও ব্লিচিং। যদিও পূর্ত দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘হাসপাতাল চত্বরে জল জমে আছে এমন খবর নেই। তবুও খোঁজ নেব।’’

মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানান, মশার বংশ ধংস করাই ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া দমনের মূল কাজ। তার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অতীনবাবুর আক্ষেপ, ‘‘শহরবাসীকে বার বার সচেতন করা হলেও জল জমানোর প্রবণতা থেকেই গিয়েছে।’’

এসএসকেএমের মতো এক হাসপাতালে এমন দৃশ্য চোখে পড়ায় হতাশ পুর অফিসারেরাও। গত বছর সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনে মশা দমন অভিযান চালাতে গিয়ে নবান্নের ধমক খেতে হয়েছিল বিধাননগরের এক মেয়র পারিষদকে। এসএসকেএমের ভিতরে জল জমা নিয়ে তাই হইচই করতে চায়নি কলকাতা পুরসভা। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরকে পুরসভা বিষয়টি জানিয়েছে। শহরের অন্য সরকারি হাসপাতালগুলিতেও পুরসভার পরিদর্শন চলবে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে বলা হয়, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন