পেন্ডুলামের মতো দুলছি ভাল আর মন্দের এই উত্তাল আবহে

স্বস্তি আর উদ্বেগের দোলাচলে আমাদের অস্তিত্ব। জানা আমাদের, তবু এক একটা সময় চমকে উঠি আমরা।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৬:০৮
Share:

গ্রাফিক্স: চিরঞ্জীব পাল।

স্বস্তি আর উদ্বেগের দোলাচলে আমাদের অস্তিত্ব। জানা আমাদের, তবু এক একটা সময় চমকে উঠি আমরা।

Advertisement

এই তীব্র দাবদাহ থেকে মুক্তি দিতে রাজ্যে ঢুকে পড়ল বর্ষা। স্বস্তির এই রিমঝিম সুর যখন মনের মধ্যে বেজে উঠছে, তখনই কর্নাটকের চিত্রদুর্গ থেকে এসে পৌঁছল খবরটা। খরাক্লিষ্ট গ্রামে বৃষ্টি আনতে প্রাচীন কুসংস্কারে নগ্ন করে গোটা গ্রাম ঘোরানো হল কিশোরকে। স্বস্তির সুর ছাপিয়ে অস্বস্তির হিম শিরদাঁড়া বেয়ে নামবে না?

গুজরাতের গুলবার্গে গণহত্যা-কাণ্ডে দোষীদের সাজা ঘোষণা করল যখন আদালত, তখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কি বলব, বিলম্বিত হোক, তবু শাস্তি হয়ই এই গণতন্ত্রে? নাকি নিহত প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদের স্ত্রী জাকিয়া জাফরির হতাশায় সুর মিলিয়ে বলব, সুবিচার হল কোথায়? অবস্থান কী হবে আমাদের?

Advertisement

কোনটা সাদা, কোনটা কালো, এই বিচার কঠিন হয়ে পড়ে তাই। আমেরিকার দিকেই তাকাই না। অন্ধকার শীতের দক্ষিণ মেরুতে চলেছে মার্কিন দল, সেখানকার গবেষণাকেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে পড়া দু’জনকে উদ্ধার করে আনতে। ভয়ঙ্কর সেই বিপদসঙ্কুল যাত্রা, তবু মানুষ তার মেধা-সাহস-প্রতিভা-অদম্য মনোভাবকে একত্র করে চলেছে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে, মৃত্যুকে সম্ভাব্য জেনেই! এর চেয়ে প্রেরণাদায়ী খবর আর কিছু থাকে?

তবু, ভাল থাকি কই? ওই মার্কিন দেশেই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তখনই সভ্যতার ঘড়ির কাঁটা বনবন করে ঘুরিয়ে দেবেন উল্টো দিকে, আদিম বর্বর প্রান্তে! বলবেন, পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মুসলিমদের মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত! বলবেন এই রকম কথা, মস্করা করবেন এই ন্যক্কারজনক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে! এবং এর পরেও নিজেকে সভ্য কোনও জাতির প্রতিনিধি হিসাবে দাবি করবেন? অথবা তাঁর মন্তব্য সহ্য করে নিজেদের সভ্য হিসাবে দাবি করতে পারবে মার্কিন সমাজ?

পেন্ডুলামের মতো দুলছি ভাল আর মন্দের এই উত্তাল আবহে। তারই মধ্যে পূর্ব প্রান্ত থেকে খবর যা এসে পৌঁছাচ্ছে, তা উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে হুমকি আসলে নিতান্ত বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অন্যায়ের দাপুটে হুঙ্কার শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে গোটা উপমহাদেশের জন্যই।

আদিম এবং নবীন, সভ্যতার দুই বিপ্রতীপ যুগের সহাবস্থান চলছে। না হলে আলিপুরদুয়ারের গ্রাম সন্ধ্যা নামতেই ভূতের আতঙ্কে ঘরে ঢুকে যেত না। মোবাইল যুগকে ফুত্কারে উড়িয়ে রাতে নাকি নামছে পিছলা ভূত। পুরুষরা লাঠি-বল্লম নিয়ে রাতপাহারা দিচ্ছেন, একযোগে।

আলিপুরদুয়ারের গ্রামের কী দোষ? বিশ্বজুড়ে দিনেদুপুরে ভূতেরা নৃত্য করছে। কী করছি আমরা? তাদের আটকাতে অস্ত্রে যথেষ্ট শান কি দেওয়া যাচ্ছে?

পুনশ্চ: অস্ত্রে আবার শান বেশি না পড়ে যায়। বর্শা-বল্লম চলতে পারে, হুল হয়ে গেলে বিপদ। সব স্টিং ইদানীং শাসকের কঠোর ‘নিরপেক্ষ’ তদন্তের আওতায় পড়ছে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement