কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়

চলে যান স্যার, থাকুন স্যার

ঠিক ছ’দিন আগে ছাত্রদের স্লোগান ছিল, ‘উপাচার্যের পদত্যাগ চাই।’ মঙ্গলবারই একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে সেই স্লোগান হয়ে গেল, ‘উই নিড ইউ স্যার’, ‘ডোন্ট মিসআন্ডারস্ট্যান্ড আস’! দ্রুত আন্দোলনের অভিমুখ বদলে যাওয়ায় ‘চওড়া হাসি’ দেখা গিয়েছে রতনলাল হাংলুর মুখে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৩৭
Share:

পড়ুয়াদের অবস্থান। ডান দিকে, খোশমেজাজে উপাচার্য রতনলাল হাংলু। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

ঠিক ছ’দিন আগে ছাত্রদের স্লোগান ছিল, ‘উপাচার্যের পদত্যাগ চাই।’ মঙ্গলবারই একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে সেই স্লোগান হয়ে গেল, ‘উই নিড ইউ স্যার’, ‘ডোন্ট মিসআন্ডারস্ট্যান্ড আস’! দ্রুত আন্দোলনের অভিমুখ বদলে যাওয়ায় ‘চওড়া হাসি’ দেখা গিয়েছে রতনলাল হাংলুর মুখে।

Advertisement

ফি বৃদ্ধি নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলনের জেরে বুধবার রাতভর ঘেরাও হয়েছিলেন উপাচার্য। পদত্যাগের আর্জি জানিয়ে ২২ ঘণ্টা পরে বিধ্বস্ত হয়ে তবে বাড়ি ফিরেছিলেন রতনলাল হাংলু। আর এ দিন উপাচার্যকে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার আর্জি জানিয়ে তাঁদেরই একাংশ শান্তিপূর্ণ অবস্থান করেন। ফি প্রত্যাহারের জন্যে কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেননি ওই পড়ুয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও এ দিন সভা করেন। সভা শেষে শিক্ষকদের বার্তা ছিল, ‘আপনি থাকুন স্যার।’ হাংলুর সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আধিকারিকেরা গণসাক্ষর করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। উপাচার্য চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া একাধিক কাজের ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয়
জানান তাঁরা।

এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেই সময় তাঁকে মনমরা দেখাচ্ছিল। নিজের অফিসে ঢুকে প্রথমেই খোঁজ করেন সাংবাদিকেরা এসেছেন কিনা। যা শুনে চমকে ওঠেন সহকর্মীরাও। কেননা, বছরখানেক আগে ভক্তবালা-কাণ্ডের পরে কলেজগুলির অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন এই উপাচার্যই। সেই তিনিই কিনা সাংবাদিকেরা এসেছেন কি না জানতে চাইছেন! পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে গ্রুপ ফোটো তোলেন। আজ, বুধবার ছাত্রদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনাতেও বসবেন বলে জানিয়েছেন। ভেস্তে যাওয়া ফুটবল ম্যাচ বৃহস্পতিবার হবে বলেও তিনি জানান। ম্যাচে সাংবাদিকদের থাকতে অনুরোধ করেন।

Advertisement

গত বুধবার ভর্তি ফি নিয়ে ছাত্র বিক্ষোভের জেরে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাতভর ঘেরাও হয়ে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপালকে পদত্যাগের ইচ্ছের কথা জানান উপাচার্য। ফি-কমানোর বিষয়টি রিভিউ কমিটি গড়ে বিবেচনার আশ্বাসও দেন। এরপরেই নিয়ে আসরে নামেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফি কমানোর পক্ষে সওয়াল করেন তিনিও। স্বাধিকার নিয়ে আরও একবার বিতর্ক উস্কে বলেছিলেন, ‘‘ছাত্রদের ফি না কমালে হাংলু হোক আর যে-ই হোক, তাঁকে রাখব না।’’ তা জেনে ক্ষুব্ধ উপাচার্যের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দুনিয়ায় এক মুহূর্ত থাকতে চাই না।’’

এ দিন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি তো বলেইছি, উপাচার্য জোর করে চলে যেতে চাইলে আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু আমরা চাই না উনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও রকম অরাজকতা আমরাও বরদাস্ত করব না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ছাত্রদের কোনও বক্তব্য থাকলে সেটাও যেমন আমরা শুনব, তেমনি উপাচার্য তাঁর কোনও বক্তব্য থাকলে শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে আমাকে জানাতেই পারেন।’’

গত রবিবার রাতে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে হস্টেলে গিয়ে উপাচার্যের ইচার্বহিরাগত প্রসঙ্গে পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকছে এমন কোনও বিষয় আমাকে কেউ জানায়নি। তবে সত্যিই যদি বহিরগতদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন