Madhyamik

Madhyamik 2022: মাধ্যমিক: কেউ টুকে দিয়েছে প্রশ্ন, শূন্য খাতা দিয়েছে কেউ

সে কথাই উত্তরপত্রে লিখে গিয়েছে এক পরীক্ষার্থী। ভূগোলের এক শিক্ষক বলছেন, ‘‘একটি খাতা পেলাম, খুব মর্মান্তিক, এক পরীক্ষার্থী কোনও উত্তর না লিখে করোনা পরিস্থিতিতে সে কী প্রবল অসুবিধার মধ্যে ছিল তার সেই অসহায়তার কথা লিখে পাশ করিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছে, ভাবতে পারেন!’’

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২ ০৬:৪৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

উত্তর দূরস্থান, বরং খাতা জুড়ে হুবহু প্রশ্নপত্রটাই টুকে দিয়েছে কেউ। কেউ বা, উত্তর যা লিখেছে তার সঙ্গে প্রশ্নের নূন্যতম সংশ্রব নেই। কেউ বা খাতা জমা দিয়েছে একটি অক্ষরও না লিখে। করোনা-পর্বের পরে খাতায় কলমে প্রথম বার মাধ্যমিকের খাতা দেখতে গিয়ে তাই চোখ কপালে উঠেছে পরীক্ষকদের। হতভম্ব এক শিক্ষকের তাই আফসোস, ‘‘এত বছর ধরে মাধ্যমিকের খাতা দেখছি, এমন দুর্দশা কখনও দেখিনি। করোনা যেন সব লন্ডভন্ড করে দিয়েছে!’’

Advertisement

মাধ্যমিক শেষে শিক্ষকদের বিভিন্ন বিষয়ের খাতা বিলি বণ্টন শুরু হয়েছে সদ্য। আর তা দেখতে গিয়েই এমন অভিজ্ঞতা তাঁদের। বানান, বাক্যগঠন, শব্দচয়নের ভুল নতুন নয়। কিন্তু এ বারের খাতায় পরীক্ষার্থীদের উত্তরের বহর দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত শিক্ষকেরা। বাংলা-ইতিহাস-ভূগোল প্রায় সব বিষয়েই এমন উত্তরের ছড়াছড়ি বলে জানা গিয়েছে।

বাংলার খাতা দেখছেন এক শিক্ষিকার অভিজ্ঞতা, ‘‘খাতা খুলে দেখি, অধিকাংশই একটি অক্ষরও লেখেনি। ফাঁকা খাতা জমা দিয়ে গেছে। কেউ বা হুবহু টুকে দিয়েছে বাংলা প্রশ্নপত্রটি।’’ ইতিহাসের এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘প্রশ্নের সঠিক উত্তর না লিখে সম্ভাব্য যতগুলো উত্তর প্রশ্নে দেওয়া রয়েছে তার সবকটি লিখে দিয়েছে খাতায়।’’ এক বাংলা শিক্ষিকা বলছেন, ‘‘এক জন পরীক্ষার্থীকে দেখলাম একটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে চেষ্টা করে বাংলার কয়েকটি বর্ণমালা অগোছালো ভাবে লিখেছে। বাক্য গঠন তো দূরের কথা উত্তর খুঁজতে ধাঁধায় পড়তে হচ্ছে।’’ পাশাপাশি দীর্ঘ অনভ্যাসে অনেকে অক্ষরের বিন্যাস অর্থাৎ অক্ষরটাই লিখেছে উল্টো। ইংরাজির এক শিক্ষকের অভিজ্ঞতা, ‘‘নিজের নামের বানান ইংরেজিতে লিখতে গিয়ে কেউ ‘ডি’ ‘এল কিংবা ‘বি’ অক্ষরগুলিই উল্টো লিখেছে।’’ কারণ হিসেবে মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, পড়াশোনার সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্কহীনতায় ‘টেম্পোরারি ডিসলেক্সসিয়া’ দেখা দিয়েছে অনেকের। যার ফলে অক্ষরগুলি উল্টে গিয়েছে।

Advertisement

তা হলে ওই সব খাতায় পরীক্ষার্থীরা কি নম্বর পাচ্ছেন? এক পরীক্ষক বলেন, “সাধারণত শূন্য কাউকে দেওয়া হয় না। পর্ষদের এমনই নির্দেশ। বলা হয়েছে অন্তত ১ বা ২ নম্বর যেন পায় সেটা দেখতে। কিন্তু শূন্য খাতায় কী নম্বর দেব বলুন তো!’’ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ছেলেমেয়েরা যে নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়াশোনা করেছেন, তা অস্বীকার করা যায় না। আর সেজন্য ‘সহানুভূতিশীল’ হয়ে খাতা দেখার নির্দেশ রয়েছে পরীক্ষকদের। কিন্তু শূন্য খাতায় কতটা আর সহানুভূতি দেখানো যায়, প্রশ্ন পরীক্ষকদের একাংশের।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর মতে, “পর্ষদ এই সব পরীক্ষার্থীদের পাশ করানোর জন্য আলাদা করে বিবেচনা না করলে এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার সার্বিক ফল খুব খারাপ হতে চলেছে। যা হাল, গ্রেস দিয়েও কি সবাইকে পাশ করানো যাবে!” নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন আবার বলছেন, “এই পরিস্থিতির জন্য কিন্তু পরীক্ষার্থীদের দিকে আঙুল তোলা যাবে না। স্কুলগুলো পঠনপাঠনের জন্য একটু আগে খুলতে পারত। মাধ্যমিক পরীক্ষা এক মাস পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারত। তা হলে এমন হাল হত না। পরীক্ষার্থীরা কিছুটা সময় পেত।’’

আর, সে কথাই উত্তরপত্রে লিখে গিয়েছে এক পরীক্ষার্থী। ভূগোলের এক শিক্ষক বলছেন, ‘‘একটি খাতা পেলাম, খুব মর্মান্তিক, এক পরীক্ষার্থী কোনও উত্তর না লিখে করোনা পরিস্থিতিতে সে কী প্রবল অসুবিধার মধ্যে ছিল তার সেই অসহায়তার কথা লিখে পাশ করিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছে, ভাবতে পারেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন