ফাইল চিত্র।
বাধা মূলত দু’টি। প্রথমত, মানুষের করোনা-ভীতি। দ্বিতীয়ত, আর্থিক টানাটানি। ক্রমাগত বাধার মুখে পূর্ত দফতরের পুনর্বিন্যাসের কাজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার।
পরিকাঠামো ক্ষেত্রে কাজের বহর বেড়েছে অনেকটাই। তাই পরিধি বাড়িয়ে পূর্ত দফতরকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করেছিল নবান্ন। সেই পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাবে সিলমোহরও দেয় রাজ্য মন্ত্রিসভা। কিন্তু কাজ স্থগিত হল জোড়া বাধায়।
আগে গোটা রাজ্যে পূর্ত দফতরের কাজকর্ম তিনটি জ়োনে (নর্থ, ওয়েস্ট ও সাউথ) ভাগ করা হয়েছিল। পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাবে জ়োনের সংখ্যা বাড়িয়ে (নতুন হবে সেন্ট্রাল ও সাউথ-ওয়েস্ট) পাঁচ করার কথা বলা হয়। তা ছাড়া রাস্তাঘাটের বিষয়টিকে পুরোপুরি আলাদা ডিরেক্টরেটের আওতায় আনতে চায় সরকার। পুনর্বিন্যাস পরিকল্পনার আওতায় সেতু তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে পৃথক শাখা গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু থমকে গিয়েছে সবই। পূর্ত দফতরের অন্দরের খবর, এখন পুনর্বিন্যাসের কাজ করতে হলে বহু অফিসার-কর্মীকে জেলায় বদলি করতে হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে যাঁরা বদলি হবেন, তাঁদের বাড়ি ভাড়া পাওয়া বেশ কঠিন। সরকারের পক্ষে এই বিপুল সংখ্যক অফিসারের জন্য রাতারাতি আলাদা ব্যবস্থা করাও সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে কর্মী-অফিসারদের মধ্যে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছিল, যা চাপ বাড়াচ্ছিল সরকারের উপরে। “এত বড় কাজের জন্য সময়টা একেবারেই উপযুক্ত নয়। সেই জন্যই পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হয়েছে,” বলেন পূর্ত দফতরের এক কর্তা।
পূর্তকর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, পুনর্বিন্যাসের ফলে জ়োনের সংখ্যা বাড়ায় অফিসারের সংখ্যাও বাড়াতে হত। চিফ ইঞ্জিনিয়ার, সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার, এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্যান্য পদের অফিসার মিলিয়ে চারশোর বেশি নিয়োগ হওয়ার কথা। অফিস পরিকাঠামো তৈরি-সহ বিভিন্ন কাজে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু করোনা ও আমপানের জেরে সব দফতরকেই খরচ কমাতে হচ্ছে। এটাকে পুনর্বিন্যাস স্থগিত রাখার দ্বিতীয় কারণ হিসেবে দেখছে সংশ্লিষ্ট শিবির।
অতিমারির আগে থেকে জেলায় জেলায় বিভিন্ন সেতুর স্বাস্থ্যপরীক্ষা চলছিল। অনেক সেতুরই অবস্থা ভাল নয়। বহু রাস্তারও বেহাল দশা। চলতি বছরের মধ্যে সারা রাজ্যে রাস্তার হাল ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব মিলিয়ে বিপুল কাজের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে পূর্ত দফতরের সামনে। তাই বিপুল কাজের বোঝা সামলাতে পুনর্বিন্যাস সেরে ফেলা জরুরি ছিল বলে মনে করছেন অনেকে। “পুনর্বিন্যাসের পরে এক-একটি জ়োনের দায়িত্বে চার-পাঁচটি জেলা চলে আসায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিকাঠামো তৈরির কাজে নিবিড় নজরদারি সম্ভব হবে। পাশাপাশি, রক্ষণাবেক্ষণের কাজেও অযথা দেরি হবে না। কিন্তু পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া কবে শেষ হবে, তা বলা সম্ভব নয়,” বলেন পূর্ত দফতরের এক কর্তা।