রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি

ফুটেজ দেখিয়ে বিতর্ক বাড়াল রাজ্য বিজেপি

উত্তেজক পরিস্থিতিতে বিজেপি-র এমন কৌশলকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’ বলেই মনে করছে রাজ্যের অন্য দুই বিরোধী দল সিপিএম এবং কংগ্রেস। ভিডিও ফুটেজ দেখানোর পাশাপাশিই বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ এবং রাষ্ট্রপতির শাসন জারির দাবি তুলেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৭ ০৪:০১
Share:

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র।

অশান্ত এলাকায় শান্তি ফেরাতে আধা-সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে সহায়তা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্য প্রশাসন কড়া হাতেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে বলে বিবৃতি দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিক। এমতাবস্থায় উত্তর ২৪ পরগনার অশান্ত এলাকার কিছু ভি়ডিও ফুটেজ সাংবাদিক সম্মেলনে দেখিয়ে উল্টো পথে হাঁটল রাজ্য বিজেপি!

Advertisement

উত্তেজক পরিস্থিতিতে বিজেপি-র এমন কৌশলকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’ বলেই মনে করছে রাজ্যের অন্য দুই বিরোধী দল সিপিএম এবং কংগ্রেস। ভিডিও ফুটেজ দেখানোর পাশাপাশিই বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ এবং রাষ্ট্রপতির শাসন জারির দাবি তুলেছেন। তাঁর ওই দাবির সঙ্গেও সহমত নয় অন্য বিরোধীরা। তৃণমূলের সঙ্গে মেরু দূরত্বে রাজনৈতিক অবস্থান হলেও এই ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের চেযারম্যান বিমান বসু পরিষ্কারই বলেছেন, বিজেপি তাদের ‘গেমপ্ল্যান’ মাফিক উত্তেজনায় ইন্ধন দিচ্ছে এবং সরকারকে বরখাস্ত করার দাবি করছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ৩৫৬ ধারা জারি করার মতো কোনও পরিস্থিতি হয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন না।

বিজেপি-র রাজ্য দফতরে কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে দিলীপবাবু বুধবার বলেছেন, ‘‘প্রশাসন চালানো আপনাদের (তৃণমূলের) কম্ম নয়! তাড়াতাড়ি পদত্যাগ করুন। তাতে বাংলা বাঁচবে। কেন্দ্রের কাছে আবেদন করছি, ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করুন।’’ বিজেপি উত্তর ২৪ পরগনার অশান্ত এলাকার ছবি বলে ওই ভিডিও ফুটেজ দেখালেও সেগুলি প্রকৃতপক্ষে কোথাকার ছবি, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। এমন ফুটেজ দেখিয়ে কি গোলমালে আরও উস্কানি দেওয়া হচ্ছে না? দিলীপবাবুর জবাব, ‘‘আমি তো রাস্তায় গিয়ে ভিডিও দেখাচ্ছি না! সংবাদমাধ্যমকে দেখাচ্ছি।’’ সংবাদমাধ্যম কী ভাবে সেই ফুটেজ দেখাবে, তা তাঁর দায়িত্ব নয় বলে প্রসঙ্গ এড়ানোর চেষ্টা করেছেন দিলীপবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের কাছে যে প্রমাণ রয়েছে, সেটাই দেখানোর চেষ্টা করেছি। এই ফুটেজ দেখিয়ে উস্কানি দিচ্ছি না। উস্কানি দিলে রাজ্যপালের কাছে যেতাম না!’’

Advertisement

বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ‘‘একটি সম্প্রদায়ের উপরে যে লাগাতার হামলা হচ্ছে, তা নিয়ে নীরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লজ্জা হওয়া উচিত। এখনও ঘর ও দোকান জ্বালানো হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কবে পদক্ষেপ করবেন? এই বিষয়টা সামনে আসা উচিত।’’

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম অবশ্য বলেছেন, ‘‘কোনও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের কাজ নয় এটা। বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের কিছু সংগঠন কিছু দিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ফুটেজ ছড়িয়ে উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’ সেই সঙ্গেই সেলিমের প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কার্টুন ফরোয়ার্ড করলে যদি গ্রেফতার করা হয়, এই ধরনের উস্কানিমূলক প্রচারের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? নবান্ন বললে পুলিশ সক্রিয় হয়, নবান্ন বললে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে!’’ বিরোধী দলের মুখ্য সচেতক মনোজ চক্রবর্তীরও বক্তব্য, ‘‘ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে থাকলে বলব, যে কোনও দলের উচিত আরও দায়িত্বশীল হওয়া। রাজনৈতিক দলের প্রধান কাজ সমাজকে রক্ষা করা, মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানো।’’ বিরোধীদের বক্তব্য, শান্তি ফেরানোই এখন জরুরি।

সবংয়ের তেমাথানিতে সভা করতে গিয়ে এ দিনই তৃণমূলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ওরা হিন্দু-মুসলিম বিভাজন করে আমাদের অন্ধকারে ঠেলে দিতে চায়। বাংলায় যুদ্ধ হলে হিন্দু-মুসলিম নয়, ১০ কোটি বঙ্গবাসীর সঙ্গে বিজেপি-র যুদ্ধ হবে!’’

ফুটেজ দেখানোর ঘটনায় রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা লঙ্ঘন করেছে বিজেপি। তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর নবান্নের এক শীর্ষ সূত্রের ইঙ্গিত, আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন