সুপ্রিম কোর্টে স্বস্তি রাজ্যের

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি টাকার বেশি নয়ছয়ের মামলায় অভিযুক্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলল সুপ্রিম কোর্ট।ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ামক তথা রেজিস্ট্রার দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তিসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৭
Share:

অভিযুক্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকার। —নিজস্ব চিত্র।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটি টাকার বেশি নয়ছয়ের মামলায় অভিযুক্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলল সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ামক তথা রেজিস্ট্রার দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তিসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অপছন্দ হলে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার স্বাধীনতা দিলীপবাবুরও রয়েছে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

গত ২১ এপ্রিল দিল্লিতে ওই মামলার চূড়ান্ত শুনানির পরে রায়দান হয়। জুলাইয়ের গোড়ায় রায়ের প্রতিলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের পৌঁছেছে। সম্প্রতি তা সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘আদালতের রায়ের প্রতিলিপি সরকারি ভাবে হাতে পাইনি। তবে তা পেলেই কর্মসমিতিতে পেশ করে যুক্তিসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

Advertisement

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি মামলার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পিএইচডি অর্জন করেছেন তিনি। পার্থবাবু এটাও জানেন, বিপুল অঙ্কের টাকা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে রেজিস্ট্রার দিলীপবাবু দীর্ঘদিন ধরে সাসপেন্ড রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দার্জিলিং আদালতে পুলিশ দুর্নীতির মামলায় চার্জশিটও পেশ করেছে। সেই মামলা বিচারাধীন। পালা করে অস্থায়ী রেজিস্ট্রাররা দায়িত্ব সামলাচ্ছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের। ফলে, নানা সমস্যা হচ্ছে। সে জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে রেজিস্ট্রারে বিরুদ্ধে ‘যুক্তিসম্মত সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার পক্ষপাতী শিক্ষা দফতরও। তবে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও আর্থিক দুর্নীতি বরদাস্ত করা যায় না। আমরা সব সময়েই কড়া পদক্ষেপের পক্ষপাতী। এ ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত যুক্তিগ্রাহ্য পদক্ষেপ করবে।’’

বস্তুত উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক দুর্নীতির মামলা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই রাজ্যের শিক্ষা দফতর সহ নানা মহলে হইচই চলছে। কারণ, বাম আমলে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অরুণাভ বসু মজুমদার ওই বিপুল অঙ্কের টাকার দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন। গোড়া থেকেই অভিযুক্ত রেজিস্ট্রার দিলীপবাবু ‘এক টাকার দুর্নীতি প্রমাণ হলে ইস্তফা দেব’ বলে বারেবারে ঘোষণা করেন। উপাচার্য তা নিয়ে ৩ দফায় তদন্ত করান। সব ক্ষেত্রেই জানানো হয়, টাকা নয়ছয় হয়েছে। তৎকালীন অ্যাডভোকেট জেনারেল প্রয়াত বলাই রায়ও দুর্নীতিতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর-এর পরামর্শ দেন। কিন্তু বাম নেতাদের একাংশ আসরে নামায় প্রতি পদে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় অরুণাভবাবুকে। কিন্তু তিনি মাটিগাড়া থানায় এফআইআর করেন দিলীপবাবু সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। দিলীপবাবু সাসপেন্ড হন।

তবে দিলীপবাবু তখন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে স্থগিতাদেশ পান। বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হলে সেখান থেকেও দিলীপবাবুর পক্ষেই রায় হয়। এরপরে সুপ্রিম কোর্টে যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই মামলার রায়েই সুপ্রিম কোর্ট এ বার হাইকোর্টের আদেশগুলিকে খারিজ করে দিল।

ইতিমধ্যে ২০১১ সালে ক্ষমতাসীন হয় তৃণমূল। সেই সময়ে দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে থাকা মামলায় চার্জশিট দিতে পুলিশ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর হস্তক্ষেপে পুলিশ দ্রুত চার্জশিট পেশ করে। এর পরে কর্মসমিতির বৈঠকে দিলীপবাবুকে সাসপেন্ড করা হয়। বিভাগীয় তদন্তে দুর্নীতির স্পষ্ট প্রমাণ মেলে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের দাবি। সেই রিপোর্ট কর্মসমিতিতে পেশ হলে অনুমোদিত হয়। কিন্তু বিভাগীয় তদন্তের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন থাকায় কর্মসমিতি দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারেনি।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের সরকারি প্রতিলিপি হাতে পেলে এ বার সেই পদক্ষেপ করা যাবে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি পরামর্শদাতাদের অনেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন শিক্ষক জানান, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরে কঠোরতম পদক্ষেপ করার পথেই হাঁটা উচিত কর্তৃপক্ষের। প্রাক্তন উপাচার্য অরুণাভবাবু বলেন, ‘‘বি‌শ্ববিদ্যালয় আমজনতার টাকায় চলে।
সেখানে এক টাকা নয়ছয় হওয়াও উচিত নয়। অথচ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির ঘটনা একাধিক রিপোর্টে ধরা পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় যে ভুল পদক্ষেপ করেনি, সেটা ফের স্পষ্ট হল।’’ তবে এদিন দিলীপবাবুর মন্তব্য জানা যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন বেজে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন