এটিএম প্রতারণায় কটাক্ষ কেন্দ্রকেই

এটিএম-প্রতারণা নিয়ে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী, দু’পক্ষই উদ্বিগ্ন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় গত তিন দিনে এটিএমের মাধ্যমে ৬০ জন গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা গায়েব হয়েছে। যাদবপুর, চারু মার্কেট, কড়েয়া, নেতাজিনগর থানা এলাকার এটিএম প্রতারণার ঘটনায় ইতিমধ্যেই তদন্তভার হাতে নিয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা দফতর। লালবাজার জানিয়েছে, সমস্ত টাকাই দক্ষিণ দিল্লির বিভিন্ন এটিএম থেকে তোলা হয়েছে।

Advertisement

এটিএম-প্রতারণা নিয়ে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী, দু’পক্ষই উদ্বিগ্ন। মঙ্গলবার বিধানসভায় দৃষ্টি আকর্ষণী পর্বে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাটের ঘটনায় উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। জালিয়াতির এই ঘটনায় তাঁরাও উদ্বিগ্ন বলে জানান পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

আধার কার্ডের সঙ্গে সব নথির ‘লিঙ্ক’ বা সংযোগস্থাপন কতটা সমীচীন, সেই প্রশ্ন তোলেন সুজনবাবু। তাঁর দাবি, অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাটের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারের তরফে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে হবে। ফিরহাদ জানান, আধার কার্ডের সঙ্গে সব নথির লিঙ্ক স্থাপন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হয়েছেন। তাঁরা নীতিগত ভাবে এই লিঙ্কের বিরোধী। কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে ফিরহাদের মন্তব্য, নোটবন্দির ফলে মানুষের টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে তা-ও চলে যাচ্ছে প্রতারকের হাতে!

Advertisement

কয়েক দিন ধরে যাদবপুরের বিভিন্ন গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও হচ্ছিল। এখন তা যাদবপুরের গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়েছে। যে-সব গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও হয়েছে, তাঁদের এটিএম কার্ডের তথ্য চুরি হয়েছে আগেই। সেই তথ্য ব্যবহার করেই প্রতারকেরা দিল্লি থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ।

অভিযোগ পেয়েই লালবাজারের ব্যাঙ্ক-দুর্নীতি দমন শাখার কর্তারা দিল্লি পৌঁছেছেন। দক্ষিণ দিল্লির একটি এটিএমের সিসি ক্যামেরায় এক সন্দেহভাজনের ছবি গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। সিসি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, মাথায় টুপি, মুখে মাস্ক পরা এক সুবেশ যুবক এটিএম থেকে টাকা তুলছে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘সন্দেহভাজনের ছবি দেখে আমাদের সন্দেহ, ওই দুষ্কৃতী বিদেশি। গত বছর শহরে যে-‘রোমানিয়ান গ্যাং’ এই ধরনের জালিয়াতি চালাচ্ছিল, তাদের সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে।’’

লালবাজার জানায়, গত বছর একই কায়দায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গোল পার্ক শাখায় একাধিক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। সে-বার রোমানিয়ান, নাইজেরিয়ান গ্যাং-এর আট জন গ্রেফতার হয়েছিল। এক জন ফেরার। গোয়েন্দা-প্রধান মুরলীধর শর্মা বলেন, ‘‘এ বারের প্রতারণার পিছনেও রোমানিয়ান গ্যাং সক্রিয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। দিল্লির যে-এটিএম থেকে টাকা তোলা হয়েছে, তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

লালবাজারের কর্তারা শহরের সব ব্যাঙ্কের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গোয়েন্দা-প্রধান বলেন, ‘‘শহরে এখনও প্রায় ২৫০ এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী নেই। ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষকে সব এটিএমে রক্ষী বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ‘অ্যান্টি স্কিমিং মেশিন’ এবং ই-সার্ভিল্যান্স চালু করতে বলা হয়েছে।’’ পুলিশের তরফেও বাইক নিয়ে এটিএমে নজরদারি চালানো হবে। গ্রাহকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে গোয়েন্দা-প্রধান জানান, গ্রাহকদের বছরে অন্তত তিন বার এটিএমের পিন নম্বর বদলানো উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন