বর্জ্য-দূষণেই বিপন্ন বাংলার নদনদী, মানছে সরকারও

পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ নিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সম্প্রতি যে-‘স্টেটাস রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে, তাতে বিভিন্ন নদনদীর বেহাল দশার কথা সরাসরি মেনে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ১২:০০
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

শস্যশ্যামলা বাংলা সব অর্থেই নদীমাতৃক। কিন্তু এমন একটি রাজ্যের বেশ কিছু নদনদী মরতে বসেছে বলে পরিবেশকর্মীরা লাগাতার অভিযোগ করে আসছেন। সেই অভিযোগে এ বার সিলমোহর দিল সরকারও।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ নিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সম্প্রতি যে-‘স্টেটাস রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে, তাতে বিভিন্ন নদনদীর বেহাল দশার কথা সরাসরি মেনে নেওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্যের বেশির ভাগ নদীই স্নানের অযোগ্য। মাথাভাঙা, চূর্ণী ও বিদ্যাধরীর জল কোনও প্রাণীর জীবনধারণের পক্ষে অনুকূল নয়। বহরমপুর, পলতা এবং গার্ডেনরিচে গঙ্গার জলে পেটের রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর পরিমাণ যে মাত্রাছাড়া, সেটাও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে স্টেটাস রিপোর্টে।

৫ জুন, পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠানে পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের পরিবেশ সংক্রান্ত স্টেটাস রিপোর্ট প্রকাশ করেন। রাজ্যে পরিবেশের হাল ঠিক কেমন, সরকারি ভাবে এই প্রথম এমন একটি রিপোর্টে তা জানানো হল। পরিবেশকর্মীদের অনেকেই বলছেন, পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র নিজে দেশের প্রথম সারির নদী-বিশেষজ্ঞ। তাই রাজ্যের বিভিন্ন নদনদীর পরিস্থিতি তুলে ধরতে তিনি দ্বিধা বোধ করেননি। এমনকী নদী সম্পর্কিত মূল্যায়নে তিনি এ কথাও লিখেছেন যে, যথোচিত গুরুত্ব দিয়ে রাজ্যের জলনীতি তৈরি করা উচিত।

Advertisement

কিছু নদনদীর এমন হাল কেন?

পর্ষদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই দূষণের জন্য দায়ী মূলত শহুরে ও কলকারখানার বর্জ্য। বিশেষ করে ভাগীরথী বা হুগলি নদীর জলে ধাতু ও কীটনাশকের মতো রাসায়নিকের উপস্থিতিও মিলেছে। বিদ্যাধরীতে উত্তর ২৪ পরগনার নিকাশি বর্জ্য মিশে যাওয়ার ফলে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা তলানিতে ঠেকেছে। আর তারাপীঠের বিভিন্ন হোটেল থেকে নোংরা নিকাশি বর্জ্য এসে দ্বারকেশ্বর নদকে কার্যত মেরে ফেলার জোগা়ড় করছে।

পর্ষদ সূত্রের খবর, ভাগীরথী-হুগলি নদীর দু’পাড়ে যে-লোকালয় রয়েছে, সেখানের যাবতীয় নিকাশি এবং কলকারখানার বর্জ্য খাল, নালার মাধ্যমে নদীতে এসে পড়ছে। ভাগীরথী-হুগলি নদীর শাখানদী এবং উপনদীগুলিরও একই দশা। নদনদীর পাশের খেত থেকে কীটনাশক, রাসায়নিক দ্রব্য বৃষ্টির জলে ধুয়ে নদীতে মিশছে। তার ফলেই বা়ড়ছে দূষণ ও রোগজীবাণুর সংখ্যা।

শুধু দূষণই খলনায়ক নয়। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, রাজ্যের নদনদীগুলির ভূপ্রকৃতি ও জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পিছনে অবৈধ ভাবে যথেচ্ছ বালি তোলার ঘটনাও দায়ী। রাজ্যে নদীর চর থেকে বালি তোলা নিষিদ্ধ। কিন্তু হুগলি নদী-সহ বহু নদনদীতে রমরমিয়ে চলছে বালি খাদান। সেখানে নির্বিচার বালি উত্তোলন থেকে প্রশাসন কার্যত চোখ ফিরিয়ে থাকে। নদনদী নিয়ে পর্ষদের রিপোর্টে এত কিছু বলা হলেও বালি তোলা নিয়ে একটি শব্দও নেই। প্রশ্ন উঠছে, জেনেবুঝেই কি বিতর্কিত বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে?

পর্ষদকর্তারা এ ব্যাপারে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁদের অনেকে ঘনিষ্ঠ মহলে এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, প্রশাসন এবং পর্ষদের অস্বস্তি এড়াতেই রিপোর্টে বালি তোলার উল্লেখ করা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন