মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেন, ঋণের বোঝা সামলে খুব কষ্ট করে সরকার চালাতে হচ্ছে। সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা দিনের পর দিন বকেয়া। সেই চক্ষুলজ্জা জয় করেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রী ও বিধায়কদের বেতন এবং ভাতা বাড়াল রাজ্য সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় এই নিয়ে দ্বিতীয় বার।
পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য বিধায়ক-মন্ত্রীদের বেতন সম্মানজনক ভাবে দিনযাপনের তুলনায় নেহাতই অপ্রতুল! সেই পরম্পরা চালু দীর্ঘ দিন ধরেই। এখন উত্তরপ্রদেশে বিধায়কেরা পান মাসে ১ লক্ষ ৮৭ হা়জার টাকা। ছোট্ট বিধানসভা দিল্লির বিধায়কেরা পান ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে। সেই সঙ্গে বছরে ভ্রমণ ভাতা বাবদ ৩ লক্ষ টাকা। একমাত্র তেলঙ্গানায় বিধায়কদের বেতন মাসে আড়াই লক্ষ টাকা করা নিয়ে বিতর্ক বেধেছিল। অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এ বারের বর্ধিত বেতন ধরে বাংলার বিধায়কেরা পাবেন ২১ হাজার ৮৭০ টাকা করে। অফিসে হাজিরা দিলে বা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকলে তাঁদের প্রাপ্য দৈনিক এক হাজার টাকা ভাতা অপরিবর্তিতই থাকছে। মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে ওই এক হাজার বেড়ে হচ্ছে দু’হাজার। সব মিলিয়ে মন্ত্রীরা মাস গেলে পাবেন ৮১ হাজার ৩০০ টাকা। মুখ্যমন্ত্রী পাবেন ৮৬ হাজার ৩০০ টাকা। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেন, তিনি বেতন নেন না।
আরও পড়ুন: মহুয়া মৈত্রকে ‘কটূক্তি’ করার অভিযোগে ‘ফেরার’ বাবুলকে ধরার নির্দেশ
বিধানসভায় ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি (মেম্বার্স ইমোলিউমেন্টস্) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৭’ এবং ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল স্যালারিজ অ্যান্ড অ্যালাওন্সেস (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৭’— এই জোড়া বিল পাশ হয়েছে শুক্রবার। মুখ্যমন্ত্রী এর আগে বিধানসভায় বলেছিলেন, পঞ্চায়েত সদস্য থেকে শুরু করে বিধায়ক পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিদের বেতন বাড়ানো উচিত। তাতে জীবনধারণে কিছুটা স্বস্তি মেলে, দুর্নীতির প্রবণতাও কমে। বিল পাশ করাতে গিয়ে এ দিন সরকার পক্ষ সেই যুক্তিই দিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস বলেছে, শুধু বেতন বাড়ানোই নয়। বিধায়কদের মর্যাদা সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করে দেওয়া হোক। কারণ, থানার ওসি-রাও অনেক সময়ে বিধায়কদের আমল দেন না! আর এক বিরোধী পক্ষ বামফ্রন্ট প্রশ্ন তুলেছে, বিধায়কদের বেতন নিজেরা বাড়িয়ে নেওয়া কি আদৌ সমীচীন?
বস্তুত, বাম জমানায় একাধিক বার মন্ত্রী-বিধায়কদের ছিটেফোঁটা বেতন কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত তখন যুক্তি দিতেন, মন্ত্রীরা এমন অনেক সুযোগ-সুবিধা পান, যার জন্য তাঁদের বেতন কম থাকলে অসুবিধা নেই। আর জনপ্রতিনিধিদের সাধারণ জীবনযাপনই দৃষ্টান্ত হওয়া উচিত। কেউ কেউ অবশ্য বলেন, সিপিএমের বিধায়কদের বেতন যে হেতু তাঁদের হাতে সরাসরি না এসে দলের তহবিলে যায় এবং দল থেকে তাঁরা ভাতা পান, তাই বেতন বৃদ্ধি নিয়ে তাঁদের বিশেষ মাথাব্যথা নেই!