রামকৃষ্ণদেবের উপদেশ ছিল, সংসারে থাকতে হবে পাঁকাল মাছের মতো। যাতে পিছলে যাওয়া যায়! কিন্তু পাঁকাল মাছ দেখতে কেমন? জানেন না অনেকেই। সেটা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে যে!
তেমনই শাল মাছ। বাজারে শোলের দেখা মিললেও শাল মেলা দুষ্কর। বা ধরা যাক স্বর্ণপুঁটি, কাঞ্চনপুঁটি, তিতপুঁটি! আবার বাটার মধ্যে রাইবাটা এক রকম, পদ্মবাটা অন্য রকম। কিংবা বাঁশপাতা মাছ!
এখন সে মাছও নেই, রসনার সুখও নেই।
তবে হারিয়ে যাওয়া মাছ ফেরাতে এক বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য মৎস্য দফতর। যেখানে রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বড় বড় খাল-বিল জুড়ে দেওয়া হবে নদ-নদীর সঙ্গে। যার ফলে খাল-বিলের জলে নদীর জল মিশবে আর সেখানেই চাষ সম্ভব হবে হারিয়ে যাওয়া মৎস্যকুলের।
গত বছর প্রথম মুর্শিদাবাদের লালগোলায় ডালগাংগিল বিলে এই প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০ কোটি টাকা খরচ করে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই বিলের সঙ্গে গঙ্গার সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। মৎস্য দফতর জানাচ্ছে, গঙ্গা থেকে আড় মাছ, গোলসা ট্যাংরা ওই বিলে এখন ঢুকছে। রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবোস, পাবদা, গুরজাওলির ওজনও অনেকটা বেড়েছে।
নদিয়ার মদনপুরে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বৈশর বিলের ক্ষেত্রে ২৫ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে কাপাইচণ্ডী বিলকে ৮ কোটি টাকা খরচ করে ফুলহার নদীর সঙ্গে জু়ড়ে দেওয়ার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। আবার পূর্ব মেদিনীপুরের আলমপুরে মৎস্য দফতরের এক খামারে সমুদ্রের জল ঢোকাতে ৪০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে মৎস্য উন্নয়ন নিগম।
মৎস্যবিজ্ঞানী অমলেশ চৌধুরী জানান, এই বাংলায় ৮৪ রকমের মাছ ছিল, যার মধ্যে বেশির ভাগই হারিয়ে গিয়েছে। তাঁর আশা, ‘‘খাল-বিলের সঙ্গে নদ-নদীর সংযোগ হলে খলসে, খয়রা, বাচা, ফ্যাসা, গোলসা ট্যাংরা, বেলে, রায়খর, কুরসা, রাইবাটা, পদ্মবাটার মতো মাছ সুলভে পেতে বেশি সময় লাগবে না।’’
মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের কথায়, ‘‘রাজ্যে মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে, হারিয়ে যাওয়া মাছও ফিরিয়ে আনতে হবে। বিলে নদীর জল ধরে রেখে মাছ চাষ করলে আমরা লক্ষ্যপূরণের দিকে এগোতে পারব।’’
তবে মৎস্যবিজ্ঞানীদের মতে, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ, চাষের জমিতে লাগামছাড়া রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। বৃষ্টির জলে সে সব ধুয়ে নদী-খাল-বিলে পড়েছে এবং বহু মাছই সে সব সহ্য করতে পারেনি। ধীরে ধীরে তারা হারিয়ে গিয়েছে বাঙালির পাত থেকে।
মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘যে সব জায়গায় খাল-বিলের সঙ্গে নদ-নদীকে জোড়া হচ্ছে, আমরা সেই সব জায়গায় জৈব চাষের জন্য বিশেষ প্রচার করব। মৎস্য দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এটা করা হবে।’’