প্রতীকী ছবি।
আয় বুঝে ব্যয়। গেরস্থের সংসারে নিয়ম এটাই। কিন্তু রাজ্যের গেরস্থালিতে আয় কমলেও ব্যয় কমার কোনও লক্ষণ নেই। তার জেরে চলতি আর্থিক বছরের প্রথম আট মাস পর ঋণের বোঝা, রাজস্ব ঘাটতি এবং আর্থিক ঘাটতি গত আট বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।
সম্প্রতি রাজ্যের অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল (এজি) ২০১৮-র নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি আয়-ব্যয়ের যে হিসাব তৈরি করেছেন তাতে ইঙ্গিত রয়েছে, বাজার থেকে বিপুল ধার না-করলে শেষ চার মাস চালানো মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। এমন অবস্থায় অদূর ভবিষ্যতে সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ দেওয়া বা বেতন কমিশনের সুপারিশ পেলে তা বলবৎ করার সম্ভাবনা স্বপ্নের অতীত বলেই মনে করছেন অর্থ দফতরের কর্তারা।
কেন এই অবস্থা তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নবান্নের বাজেট বিভাগের কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রথমে নোট বাতিল ও তার পরে তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর ফলে রাজ্যের আর্থিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশ কম হয়েছে। আয় কম হওয়ায় খরচ সামলাতে বাজার থেকে ধার করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।
আরও পড়ুন: দিনভর দুর্ভোগে পাতে শুধু ডিমভাত
যদিও এ কথা মানতে নারাজ অর্থ দফতরেরই একাংশ। তাঁদের মতে, আবগারি বা স্ট্যাম্প ডিউটি খাতে তো রোজগার কমেনি। তা হলে জিএসটি বা ভ্যাট বাবদ আয় তলানিতে কেন? ওই কর্তারা মনে করছেন, রাজ্যে উল্লেখযোগ্য আর্থিক কারবার বা শিল্প-বাণিজ্য নেই। তার ফলে কর আদায়ও হয়েছে নামমাত্র।
বেহিসেবি ধারের খপ্পরে পড়ে আর্থিক অবস্থা যে কাহিল হওয়ার জোগাড়, তা মেনে নিচ্ছেন নবান্নের শীর্ষমহল। গত বাজেটে চলতি বছরে বাজার থেকে ২০ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। কিন্তু নভেম্বরের মধ্যেই ২৯ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা ধার করা হয়ে গিয়েছে। মাসে গড়ে ৩৭০০ কোটি টাকা বাজার থেকে নেওয়ার এই প্রবণতা আগে কখনও ছিল না বলেও মানছেন কর্তারা।
তবে একই সঙ্গে তাঁরা দোষ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় সরকারকেও। ওই অর্থ কর্তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় করের অংশে হিসেবে প্রাপ্য টাকার মাত্র অর্ধেক এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে। কেন্দ্রীয় অনুদানের মাত্র ২৯% এসে পৌঁছেছে। ফলে দিল্লির অসহযোগিতাও রাজ্যের খারাপ পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
যদিও আর্থিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকার ব্যয় সংকোচের পথে হাঁটলে পরিস্থিতি এত কঠিন হতো না। এজি-র হিসাব দেখাচ্ছে, আয় কমলেও রাজ্যের পরিকল্পনা বহির্ভূত ব্যয় নিয়ন্ত্রণের কোনও লক্ষণ নেই। যেখানে সম্পদসৃষ্টিকারী নতুন প্রকল্পে মূলধনী ব্যয় প্রথম ৮ মাসে বাজেটের ৪৩%-এ আটকে রয়েছে, সেখানে পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতের বরাদ্দ টাকার ৬৫% খরচ হয়ে গিয়েছে। যার পরিমাণ ৬৩ হাজার ৪১৯ কোটি। অন্য দিকে মূলধনী ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ১৭২কোটি টাকা।
অর্থ কর্তাদের যুক্তি, পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে নতুন খরচ বাড়েনি। কিন্তু পূর্ব ঘোষিত মেলা, খেলা, উৎসব, ভাতার খরচ বেড়েছে। বেড়েছে পঞ্চায়েত-পুরসভায় দেওয়া টাকার পরিমাণও। তার জেরেই এই খাতে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি।