পুষ্টিও লাগবে গায়ে, আবার মাটিও হবে উর্ব্বর। আর খাদ্য শস্যের মধ্যে সেই কাজ অতি অনায়াসেই করতে পারে যে কোনও ডাল। কারণ ডাল যেমন মানুষের শরীরে প্রোটিন জোগাতে পারে, তেমন ডালের গাছও বাতাস থেকে নাইট্রোজেন জুগিয়ে মাটিকে উর্ব্বর করে। আর রাজ্যে এই ডাল চাষ বাড়াতে আগামী দিনে অন্য ভূমিকায় দেখা যাবে মহিলাদের।
রাজ্য জুড়ে মুগ, মুসুর, ছোলা, খেসারির মতো ডালের উৎপাদন বাড়াতে কয়েক বছর ধরেই উদ্যোগী রাজ্য সরকার। একটি আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন সংস্থার আর্থিক সাহায্যে এ বার বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন জেলার মহিলাদের ডাল চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও নদিয়ার ১০০টি গ্রামের ১৮টি ব্লকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শেষ। ওই জেলাগুলিরই আরও ১০০টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক পরিবারের পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের ডাল চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করতে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিজ্ঞানীরা। মূলত ধান চাষের পর পড়ে থাকা জমিতেই কম খরচে কী ভাবে ডাল চাষ করা যায় মহিলাদের সেই প্রশিক্ষণই দেওয়া হচ্ছে। আর এই কাজে এগিয়ে এসেছে রাজ্যের কৃষি দফতর ও কেন্দ্রীয় কৃষি অনুসন্ধান সংস্থাও।
কেন মহিলাদের বেছে নেওয়া হচ্ছে? আর্থিক কারণে গ্রামের মহিলাদের খাদ্যে প্রোটিন কম থাকে। ডাল সেই অভাব পূরণ করতে পারে। আবার ডাল থেকে তৈরি বড়ি-সহ অন্যান্য পণ্য বিকল্প আয়ের পথও হতে পারে। পাশাপাশি ডাল চাষে খরচ কম, পরিশ্রমও বিশেষ করতে হয় না ও জল লাগে না বললেই চলে। যে কারণেই মহিলাদের আরও বেশি করে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিজ্ঞানী কৌশিক ব্রহ্মচারীর দাবি, ডালের বীজ ছড়িয়ে দিলেই গাছ। তার পর সামান্য কিছু পরিচর্যা। আর ডাল গাছের শিকড় মাটির গভীর পর্যন্ত যেতে পারে বলে নীচ থেকেই জলে নিতে পারে। ফলে মহিলাদের এই চাষে অর্থের প্রয়োজন অনেক কম।
পশ্চিমবঙ্গে ডালের চাহিদা রয়েছে বছরে ১২ লক্ষ টনের মতো। সেখানে কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে রাজ্যে ডাল উৎপাদন হয়েছে তিন লক্ষ ৩৬ হাজার টনের মতো। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে আট লক্ষ টনের মতো ডালের ঘাটতি রয়েছে। যা মেটাতে হয় আমদানি করে।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্যবিজ্ঞানী রাজীব নাথ জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে ধান চাষের পর ১৭ লক্ষ হেক্টর জমি পড়ে থাকে। যেখানে কোনও চাষ হয় না। ওই জমিতেই যদি ডাল চাষ করা যায়, তা হলে রাজ্যের উৎপাদনও যেমন বাড়ে একই ভাবে মহিলা-শিশুরাও প্রোটিন পায় এবং আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। ২০২০ সাল পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ চলবে রাজীববাবু জানান।
নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্যের কৃষি দফতরও আলাদা করে সাতটি জেলার ৩২টি ব্লককে চিহ্নিত করেছে। যেখানে উন্নত প্রযুক্তিতে ডাল চাষের বিশেষ ভাবে উৎসাহ দেওয়া হবে। যার জন্য দফতরের পক্ষ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। কৃষি দফতরের এক কর্তা জানান, এই কাজের জন্যও বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালকে প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।