বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। এই অবস্থায় স্কুলশিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের খসড়া আচরণবিধিতে কিছু রদবদল ঘটাতে চলেছে রাজ্য সরকার।
স্কুলশিক্ষা দফতর সম্প্রতি ‘ওয়েস্টবেঙ্গল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কনফার্মেশন, কনডাক্ট অ্যান্ড ডিসিপ্লিন অব টিচার্স অ্যান্ড নন-টিচিং স্টাফ) রুলস ২০১৭’ নামে একটি খসড়া গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু সেই আচরণবিধির কিছু অংশ নিয়ে প্রবল বিতর্ক চলছে।
খসড়া আচরণবিধির ২২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কারও বিরুদ্ধে স্কুলশিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের কোনও অভিযোগ থাকলে তাঁরা সরাসরি আদালতে যতে পারবেন না। প্রথমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাতে হবে। একমাত্র তখনই সরাসরি আদালতে যাওয়া যাবে, যখন তাঁর স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে বা জীবনসংশয়ের মতো সমস্যা হবে।
‘‘এখানে ইংরেজির ভুল রয়েছে। ভাষার পরিবর্তন করতে হবে। ঠিক বয়ানটা এই যে, কেউ আদালতের দ্বারস্থ হতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে যেতে হবে,’’ এ দিন বলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
আচরণবিধির ১৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনও অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে গেলে পর্ষদের আগাম অনুমতি নিতে হবে স্কুলশিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের। শিক্ষামন্ত্রী এ দিন জানান, ২০০৪ সালের বিধিতে যা ছিল, তা-ই থাকবে। পুরো বিধিতে রয়েছে: কেন্দ্র, রাজ্য সরকার, পর্ষদ, সংসদ এবং স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হলে স্কুলের পরিচালন সমিতির অনুমতি নিতে হবে।
খসড়া গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগপত্র দেওয়া এবং তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ দু’টি অধিকারই সমিতির হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তা দেওয়া হয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে। তাই এ ক্ষেত্রে পরিচালন সমিতির কাছে নয়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষক অথবা শিক্ষাকর্মীকে অনুমতি নিতে হবে পর্ষদের কাছ থেকে।
ওই খসড়াতেই রয়েছে, চাকরির দু’বছরের মধ্যে পুলিশের থেকে শংসাপত্র ও শারীরিক সক্ষমতার ছাড়পত্র সংগ্রহ করে তা পর্ষদে জমা দিতে হবে। প্রতি বছর সব শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে নিজের সম্পত্তির হিসেব দাখিল করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, ২০০৪ সালের বিধির সঙ্গে এই দু’টি ধারা নতুন যোগ করা হয়েছে। এই বিষয়েও আপত্তি তুলেছে শিক্ষা মহল। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, এই দু’টি ধারা থাকছেই।
১০ নভেম্বর প্রকাশিত খসড়া বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে ৩০ দিনের মধ্যে মতামত জানাতে বলা হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী জানান, খসড়া বিধি বাতিল হচ্ছে না। শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিধি চূড়ান্ত করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘২০০৪ থেকে বিধি রয়েছে। আমরা সেটা জনসমক্ষে এনে দিয়েছি।’’ এই বিধি নিয়ে শিক্ষা শিবিরের আপত্তির বিষয়েও এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।