শিল্প চাই, লগ্নি চাই। কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন। চেয়েও আসছে না বিনিয়োগ। উপায় খুঁজতে আরও এক বার শিল্পপতিদের সঙ্গে মত বিনিময়ে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য।
আগামী ১৫ মে আলিপুরের ‘উত্তীর্ণ’ প্রেক্ষাগৃহে বাছাই করা ৪২ জন শিল্পপতির সঙ্গে রাজ্যের লগ্নি পরিস্থিতির ভালো-মন্দ নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করেছে শিল্প দফতর। শিল্প দফতরের দাবি, ২০১৮-এর গ্লোবাল বেঙ্গল বিজনেস সামিটের প্রস্তুতি হিসাবেই ডাকা হচ্ছে এই বৈঠক। কী ভাবে রাজ্যে লগ্নি আবহাওয়া অনুকুল করা যায় তা নিয়ে সেখানে শিল্পপতিদের সঙ্গে মতের আদানপ্রদান হবে। প্রয়োজনে নীতির বদল করাও যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এক শিল্প কর্তা।
যদিও শিল্প দফতরের একাংশের মতে, এর আগেও বহুবার মূলত রাজ্যের শিল্পপতিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে শুধু ভালো ভালো কথা বলেন। আর সম্মেলনে এসে দু’দিন কাটিয়ে চলে যান। তার পর আর কিছু হয় না। পরিসংখ্যানেও তা প্রমাণিত। গত তিনটি শিল্প সম্মেলনে অন্তত সাড়ে সাত লক্ষ কোটি টাকার লগ্নির প্রস্তাব আলোচনায় উঠে এসেছিল। কিন্তু বাস্তব সম্পূর্ণ উল্টো। শিল্প সম্মেলনে যাই বলা হোক, ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পলিসি অ্যান্ড প্রমোশন(ডিআইপিপি)-র হিসাব
হল ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৩৬৭ টি সংস্থা ৩৯ হাজার ৫১৬ কোটি টাকার লগ্নির লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছিল। বাস্তবায়িত হয়েছে ১৬১ প্রকল্পে ১১ হাজার ৬০৭ কোটি টাকার লগ্নি। বছরে গড়ে ২৩২১ কোটি। যা মোটেই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নয় বলে মনে করছেন শিল্প মহলের একাংশ।
সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রীও মনে করছেন শিল্পে বিনিয়োগ টানতে এ বার বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। গত ছ’বছরে সাত জন শিল্প সচিব বদলানো হয়েছে, মন্ত্রীও বদল হয়েছে। কিন্তু তাতেও ফল আসেনি। নতুন শিল্প সচিব রাজীব সিনহা অবশ্য দায়িত্ব নিয়েই বুঝিয়েছেন, লগ্নি আনার ভার একা শিল্প দফতরের নয়। সব দফতরকেই দায়িত্ব নিয়ে লগ্নি আনতে হবে। নতুন নীতি জানাতে এপ্রিলের শেষে সচিব ও বণিকসভাগুলিকে ডেকে বৈঠক করেছিলেন তিনি।
তাতে অবশ্য শিল্প তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র হাজির ছিলেন না। তা নিয়ে সরকারের অন্দরে নানা চর্চাও শুরু হয়েছিল। ১৫ তারিখের বৈঠকে অবশ্য শিল্পমন্ত্রী হাজির থাকবেন। তিনিই শিল্পপতিদের সঙ্গে মত বিনিময় করবেন বলে দফতর সূত্রের খবর। থাকবেন সচিবরাও।
শিল্প মহলের একাংশের মতে, এই ধরনের সম্মেলনের চেয়ে এখন অনেক বেশি জরুরি একটি বা দু’টি বড় সংস্থাকে উৎপাদন শিল্পে লগ্নিতে রাজি করানো। তাহলেই ঘুরতে পারে শিল্প-ভাগ্যের চাকা। ঠিক যে ভাবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য টাটাদের সিঙ্গুরে এনে চেষ্টা করেছিলেন। তা না হলে শিল্পপতিদের সঙ্গে মত বিনিময়ের বাড়তি গুরুত্ব কোথায়?