ইছামতী নদীতে মাছ ছাড়া হচ্ছে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
কয়েক বছর আগেও উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন বাজারে গেলে কই, সরপুঁটি, ট্যাংরা, ফলুই এর মতো দেশি মাছের দেখা মিলত। কিন্তু সে দিন গিয়েছে। এখন সাত সকালে বাজারে ঢুঁ মারলেও সে সব দেশি মাছ চোখে পড়ে না বললেই চলে। মৎস্য দফতরের সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজ্যের বিভিন্ন নদীতে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমছে দেশি মাছের সংখ্যা। ভারসাম্য হারাচ্ছে নদীর বাস্তুতন্ত্র। তাই কয়েকটি বাছাই করা নদী এবং জলধারে দেশি মাছের চারা ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্যের মৎস্য দফতর।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় গঙ্গা এবং ইছামতী নদীতে ইতিমধ্যেই মাছের চারা ছাড়ার কাজ শুরু হয়েছে। দেশি মাছের চারাগুলি বিভিন্ন খামার থেকে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে ছোট মাছ ধরতে নিষেধ করা হয়েছে। নদী এবং জলাধারে চারা ছাড়ার পরে জেলার কয়েকটি বড় খালেও দেশি মাছের চারা ছাড়ার কথা রয়েছে।
জেলার সহ মৎস্য অধিকর্তা দিলীপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে মাছ ধরায় নদীর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। নদীতে প্রাকৃতিক ভাবে মাছ তৈরির জন্যই ইছামতী ও গঙ্গায় দেশি মাছের চারা ছাড়া হচ্ছে। এতে মাছের জোগান বাড়বে।’’ তিনি জানান, নদীতে চটজাল দিয়ে মাছ ধরতে বারণ করা হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার অন্যতম প্রধান নদী হল ইছামতী। সংস্কারের অভাবে এই নদীটি ক্রমেই নাব্যতা হারিয়েছে। স্রোত এবং জোয়ার-ভাটা নেই বললেই চলে। ইছামতীর দেশি মাছ স্থানীয় বাজারগুলিতে এখন দেখা যায় না বললেই চলে। এই অবস্থা বদলাতে বনগাঁ মহকুমার সাতভাই কালীতলা, মুড়িঘাটা-সহ ইছামতী নদীর আটটি ঘাটে প্রায় ৮ কুইন্টাল দেশি মাছের চারা ইতিমধ্যেই ছাড়া হয়ে গিয়েছে।
ইছামতী নদীতে দেশি মাছ ছাড়ার খবরে খুশি সাধারণ মানুষ। এলাকার কয়েকজন প্রবীণ মানুষের কথায়, ‘‘আগে রয়না, বোয়াল, সরপুঁটির মতো কত রকমের মাছ পাওয়া যেত ইছামতীতে। সে সব মাছের স্বাদ ছিল আলাদা। আবার যদি নতুন করে সেই সব মাছের স্বাদ পাওয়া যায় তার থেকে ভাল কিছু হয় না।’’
সকালের বাজারে ফের দেখা যাবে হরেক রকমের দেশি মাছ, আশায় বুক বাঁধছে মৎস্যপ্রিয় বাঙালি।