আবেদন জমা পড়েছিল সাড়ে তিন বছর আগে। কিন্তু তার পরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাধের ‘বিশ্ব বাংলা’ লোগোর স্বত্ব হাতে পায়নি রাজ্য। কারণ, সরকারি আবেদনের বছরখানেক আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই লোগোর স্বত্ব পেতে পাঁচটি আবেদন করেছিলেন। তার চারটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও বাকি ছিল একটি। নবান্নের খবর, সোমবার সেই আবেদনটিও ফিরিয়ে নিয়েছেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। তবে তার আগে ট্রেডমার্ক নিয়ন্ত্রকের দফতরে অভিষেকের স্বত্বাধিকারের বিরোধিতাও করেছিল সরকার।
অভিষেক দাবি প্রত্যাহার করার ফলে এখন আর ‘বিশ্ব বাংলা’ লোগোর স্বত্ব পেতে রাজ্যের সামনে আর কোনও বাধা থাকছে না। এ সপ্তাহেই দ্য কন্ট্রোলার জেনারেল অব পেটেন্টস, ডিজাইনস অ্যান্ড ট্রেডমার্কস -এর কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট এক্সপোর্ট প্রমোশন সোসাইটি। এই সোসাইটির তরফেই ট্রেডমার্কের সরকারি আবেদন জমা হয়েছে।
আরও পড়ুন: মুকুলকে আইনি চিঠি অভিষেকের
নবান্নের খবর, ২০১৩ সালে ‘বিশ্ব বাংলা’ ব্র্যান্ড তৈরি করে হস্তশিল্পের ব্যবসা থেকে প্রশিক্ষণ, সরকারি প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিমানবন্দরে বিশ্ব বাংলার প্রথম স্টল উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেন, বিশ্ব বাংলার যে লোগো তিনি তৈরি করে দিয়েছেন তার স্বত্বাধিকার নিয়ে রাখার।
এক্সপোর্ট প্রমোশন সোসাইটি সেই মতো আবেদন দাখিলও করে। তখনই দেখা যায়, সরকারের আগেই ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বরে লোগোর স্বত্ব চেয়ে একই আবেদন করে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো। এ খবর জেনে প্রথমে থমকে যায় দফতর। সে কথা মুখ্যমন্ত্রীর কানে গেলে তিনি ক্ষুদ্র শিল্প দফতরের সঙ্গে চুক্তি করে বিশ্ব বাংলা লোগো ব্যবহারের অনুমতি দেন। ওই চুক্তিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তাঁর তৈরি করা এই লোগো ক্ষুদ্র শিল্প দফতরের অধীন সোসাইটি ব্যবহার করতে পারবে। বিনিময়ে তাঁকে কিছুই দিতে হবে না। কিন্তু সরকার যদি কোনও দিন এই লোগো ব্যবহার না করে তা হলে ওই লোগোর যাবতীয় স্বত্ব তাঁর হাতে ফিরে আসবে।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই চুক্তি হওয়ার পরেই ২০১৪ সালের ১১ জুন অভিষেক তাঁর জমা করা পাঁচটি আবেদনের চারটি প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক, পঞ্চম আবেদনটি প্রত্যাহার করা হয়নি। এই অবস্থায় রাজ্য আবেদন জমা দেয় ২০১৪ সালের ১৯ জুন। তাতে বলা হয় বিজ্ঞাপন, ব্যবসা, অফিস পরিচালনা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বিনোদন, খেলাধুলো এবং সংস্কৃতি ক্ষেত্রে সরকার এই লোগো ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ ট্রেড মার্ক রেজিস্ট্রি জানিয়ে দেয় সরকারি প্রস্তাবটি ‘নাকচ’ হয়ে গিয়েছে। কারণ, এ সংক্রান্ত নথিপত্র সরকার সময়মতো জমা দিয়ে পারেনি। যদিও রাজ্যের নিযুক্ত আইনজীবী নথিভুক্তকারী সংস্থাকে চিঠি লিখে জানান, সরকারের মতামত না নিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থা। নতুন করে তা বিবেচনা করা হোক।
এই যখন অবস্থা তখন, চলতি বছরের ৮ মে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রির পত্রিকায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পঞ্চম আবেদনটি নিয়ে কারও কোনও মতামত দেওয়ার আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। এ বার টনক নড়ে সরকারের। ৮ সেপ্টেম্বর অভিষেকের আবেদনটির বিরোধিতা করে এক্সপোর্ট প্রমোশন সোসাইটি। ১৪ সেপ্টেম্বর ফের রাজ্যের আবেদন নতুন করে শোনার আর্জিও জমা দেওয়া হয়।
এর মধ্যে গত ১০ নভেম্বর ধর্মতলায় বোমা ফাটান মুকুল রায়। দাবি করেন, বিশ্ব বাংলার আসল মালিক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিপাকে প়ড়তে হয় সরকারকে। নবান্ন জানিয়েছে, সোমবারই অভিষেক পঞ্চম আবেদনটি ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে এখন বিশ্ব বাংলার লোগোর দাবিদার কেবল রাজ্য। অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয় বসুর বক্তব্য, ‘‘গত ২ নভেম্বর ওই আবেদন প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আশা করি, এত দিনে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।’’