পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং যা বলেছেন, তার কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে চিঠি দিল রাজ্য সরকার। বিদেশ সফররত মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বলেছেন, ‘গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে পাহাড়ে আন্দোলন চলছে। পাহাড়ের মানুষ ভীত, সন্ত্রস্ত। এ অবস্থায় সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী যে চিঠি দিয়েছেন, তা সংবিধানবহির্ভূত ও জাতীয় সংহতির পরিপন্থী’। চামলিংকে এ ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করার জন্য রাজনাথের কাছে আবেদন জানিয়েছেন পার্থবাবু।
পাহাড়ে সমস্যা চলাকালীন পড়শি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘অযাচিত’ বলে মনে করছে বিরোধীরাও। কিন্তু এ দিন তারাও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের উপরে জোর দিয়েছে। তাঁরা গোর্খাল্যান্ডের পক্ষে নন বলে জানিয়েও রাজ্য বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় দিল্লিতে বলেছেন, ‘‘জিটিএ-র যে অধিকার পাওয়া উচিত ছিল, তা পায়নি। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। দার্জিলিঙের পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রীই দায়ী।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও মালদহে এ দিন ফের বুঝিয়েছেন, বিবদমান রাজ্য ও মোর্চার আলোচনায় বসা উচিত। তাতে কেন্দ্রকেও ডাকা উচিত।
দার্জিলিং জেলা সিপিএমও পাহাড় সমস্যার সমাধানের জন্য নিঃশর্ত ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দাবি জানিয়েছে। জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বা শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, সব পক্ষকেই শর্ত ছেড়ে আলোচনার টেবিলে আসতে হবে। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘আমরা আন্দোলনকারীদের পক্ষে নই। কিন্তু এটাও ঠিক যে, পাহাড়ের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। পুলিশের গুলি চালানোর ছবি পাওয়া গিয়েছে। উল্টে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে! রাজ্য সরকার যেন যুদ্ধে নেমেছে!’’
এই পরিস্থিতিতে ‘অজ্ঞাতবাসে’র খোলস ছে়ড়ে বেরিয়ে মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গ রাজ্যকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, ‘‘আসুন! আমাকে গ্রেফতার করুন!’’ গুরুঙ্গ, রোশন গিরি-সহ জিটিএ-র ৪১ জন নির্বাচিত সদস্য এবং দু’জন মনোনীত প্রতিনিধি ইস্তফা দিয়েছেন। পদত্যাগপত্র আজ, শনিবার রাজভবনে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে মোর্চার তরফে দাবি করা হয়েছে। টানা কয়েক দিন ‘গোপন ডেরা’য় থাকার পরে এ দিন সিংমারির মোর্চা দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে গুরুঙ্গ জানিয়ে দিয়েছেন, পাহাড়ের বন্ধে আপাতত কোনও ছাড় নেই। এমনকী, ইদের জন্যও বন্ধ শিথিল হচ্ছে না। গুরুঙ্গ জানিয়েছেন, ২৯ জুন পাহাড়ের সব দলের সঙ্গে বৈঠক হবে। দার্জিলিঙে ২৭ জুন জিটিএ-চুক্তি পোড়াবে মোর্চা।
মোর্চা বন্ধ চালিয়ে গেলেও রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘পাহাড়কে স্বাভাবিক রাখতে সব রকমের পদক্ষেপ হচ্ছে। এমন ফতোয়া-গুন্ডামির রাজনীতি বরদাস্ত করা হবে না!’’