(বাঁ দিকে) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সিভি আনন্দ বোস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
রাজভবনে অস্ত্রশস্ত্র মজুত রয়েছে— তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন অভিযোগের পর সোমবার রাজভবনে তল্লাশি চালান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তার পরদিনই ওই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিয়েছেন রাজ্যপাল— এমনটাই জানিয়েছেন রাজভবনের এক শীর্ষ আধিকারিক।
আইনি পরামর্শের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই আধিকারিক। তিনি আরও বলেন, ‘‘সাংসদের বিরুদ্ধে কোন কোন ধারায় মামলা দায়ের করা হবে, সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ রাজ্যপাল বোসের এ হেন তৎপরতায় তিনি যে বিচলিত নন, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন কল্যাণ। শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘উনি (রাজ্যপাল) যা ইচ্ছা করুন। কবে করবেন মামলা? মামলা করলে যেন নিজে করেন। অন্য কাউকে দিয়ে যেন না করান!’’
রাজভবন সূত্রে খবর, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-র অ-জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হবে কলকাতা হাইকোর্টে। রাজভবনের এক আধিকারিক বলেন, “রাজ্যপাল কলকাতা হাই কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ থাকার যে মানহানিকর মন্তব্য করেছেন, তার বিরুদ্ধে রাজ্যপাল মানহানির মামলা দায়ের করবেন।” মোট আটটি ধারায় কল্যাণের বিরুদ্ধে মামলা করা হতে পারে। ভারতের ন্যায় সংহিতা ২০২৩-এর সেকশন ১৫১ ও১৫২ (দেশের ঐক্য, সংহতি এবং সার্বভৌত্বের প্রতি আঘাত), ১৯৭ (মানুষকে ভুল বোঝানো এবং হিংসা ছড়ানো), ১৯৬ ‘এ’ ও ১৯৬ ‘বি’ (সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা এবং ঘৃণা ছড়ানো), ৩৫৩-১ ‘বি’ ও ৩৫৩‘সি’ (সাধারণ মনুষকে ভয় দেখানো এবং রাজ্যপালের ভাবমূর্তি নষ্ট করা), ৩৫৩-২ (দুই শ্রেণির মানুষের মধ্যে হিংসায় ইন্ধন দেওয়া) ধারায় মামলা দায়ের করা হবে। প্রসঙ্গত, মানহানি-সহ দেশের সম্প্রীতি, সংহতি ও ঐক্যের উপর আঘাত আনার মতো ধারাগুলি এনে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করা হবে।
রাজভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কল্যাণের মন্তব্য শোনার পর বেজায় ক্রুদ্ধ হন বোস। সোমবার রাজভবনে ফিরেই তিনি নির্দেশ দেন, কড়া ধারায় তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা সাজাতে। তাঁর সেই নির্দেশ মেনেই রাজভবনের আইনজীবীরা কল্যাণের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নেন। রাজ্যপালের গতিবিধি দেখে রাজভবনের কর্মীরা মনে করছেন, চলতি সপ্তাহেই কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করা হতে পারে। ঘটনার সূত্রপাত শনিবার, ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর)কে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যপাল বিবৃতি দেন। তারপরই শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ দাবি করেন, “প্রথমে বলুন রাজ্যপালকে, যেন উনি বিজেপির অপরাধীদের রাজভবনে আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করেন। উনি সেখানে অপরাধীদের রাখছেন, তাদের বন্দুক ও বোমা দিচ্ছেন এবং বলছেন যে তৃণমূলকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা করো।”এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে রবিবার সকালে বিবৃতি জারি করে রাজভবন। সেই বিবৃতির পাল্টা আবারও রাজ্যপালকে আক্রমণ করেন কল্যাণ।
যদিও, সেই সময় উত্তরবঙ্গ সফরে ছিলেন রাজ্যপাল। কল্যাণের মন্তব্যের জেরে সোমবার দুপুরে রাজ্যপাল বোস কলকাতা ফিরে পুলিশের আধিকারিক, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল এবং একটি স্নিফার ডগ-সহ নিরাপত্তাবাহিনীর একটি দল নিয়ে রাজভবন চত্বরে চিরুনি তল্লাশি চালান। এই তল্লাশি অভিযানে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদেরও পর্যবেক্ষক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তল্লাশি শেষে রাজ্যপাল জানান, রাজভবনে আপত্তিকর বা সন্দেহজনক কিছুই মেলেনি। তাই অবিলম্বে কল্যাণ প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। যদিও, রাজভবনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রাজ্যপাল জানতেন যে তৃণমূল সাংসদ কোনও অবস্থাতেই তাঁর বিরুদ্ধে করা মন্তব্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবেন না। তাই তিনি রাজভবনের আইনজীবীদের এ বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মতো কাগজপত্র তৈরি করা হচ্ছে।’’