CV Ananda Bose vs TMC MP Kalyan Banerjee

‘সত্য’ খুঁজে পেতে রাজভবন জুড়ে চিরুনি তল্লাশি, রইলেন আনন্দ বোস স্বয়ং! ‘অভূতপূর্ব’ ঘটনা দেখে হাসছেন কল্যাণ

তল্লাশির পরে নাম না-করে কল্যাণকে নিশানা করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি বলেন, ‘‘সাংসদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ওই সাংসদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাল্টা কটাক্ষ করেন কল্যাণকে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:৫৬
Share:

রাজভবনে তল্লাশি অভিযানের বিভিন্ন মুহূর্ত। তদারকি করেন স্বয়ং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। (ইনসেটে) তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

চোখে রোদচশমা। পরনে ঘিয়ে রঙের শ্যুট। সেই পোশাকেই রাজভবন ঢোকেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। উত্তরবঙ্গ সফর কাটছাঁট করে তড়িঘড়ি কলকাতায় ফিরেছেন তিনি। কারণ, তাঁর নির্দেশেই সোমবার রাজভবন প্রাঙ্গণে এবং ভিতরে চিরুনি তল্লাশি চালাল যৌথবাহিনী। নেতৃত্বে রইলেন বোস। রাজভবনের কোথাও গুলি-বোমা-বারুদ মজুত আছে কি না, তা খুঁজতে তল্লাশি চালানো হল। শেষে রাজ্যপাল বললেন, কিচ্ছু পাওয়া যায়নি রাজভবনে!

Advertisement

দুপুর আড়াইটে নাগাদ রাজ্যপালের গাড়ি এসে থামে রাজভবনের গেটের সামনে। প্রোটোকল ভেঙে গেটের মুখেই নেমে পড়েন বোস। সোজা গেট দিয়ে ঢুকে চলে যান পাশের এক অফিসে। সেখানেই অপেক্ষা করছিলেন কলকাতা পুলিশ, রাজভবন পুলিশ আউটপোস্ট, সিআরপিএফ, বম্ব স্কোয়াড ও ডগ স্কোয়াড— এই পাঁচ বাহিনীর সদস্যেরা। তাঁদের সঙ্গে সামান্য কথা বলে শুরু করেন চিরুনি তল্লাশি অভিযান।

বম্ব স্কোয়াড এবং পুলিশের কুকুরেরা রাজভবন প্রাঙ্গণ চষে বেড়ায়। ফুলের টব শুঁকে দেখে কুকুরগুলি। বম্ব স্কোয়াড যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করে। এ ভাবের গোটা প্রাঙ্গণ জুড়ে তল্লাশি চালানো হয়। সঙ্গে ছিল কলকাতা পুলিশ এবং আধাসেনা। আর সামনের সারিতে নিরাপত্তাবেষ্টনী নিয়ে যৌথবাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে ঘোরেন রাজ্যপাল স্বয়ং। প্রাঙ্গণে তল্লাশির শেষে বাহিনী ঢোকে রাজভবনের ভিতরে। নীচের তলার সব ঘর, অফিসেও চলে তল্লাশি। কোথাও কোনও সন্দেহজনক জিনিস রয়েছে কি না, তার সন্ধানে তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখা হয়। সঙ্গে ছিলেন সাংবাদিকেরাও। তিনি বুঝিয়ে দেন, লুকোচুরি নয়, সকলে যাতে সত্যটা জানতে পারেন, তাই এই পদক্ষেপ। তল্লাশির মাঝেই রাজ্যপাল বলেন, ‘‘সত্য খুঁজতে বেরিয়েছি! কিচ্ছু পাওয়া যাচ্ছে না।’’ উল্লেখ্য, তল্লাশি অভিযানের কারণে পুরো রাজভবন খালি করে দেওয়া হয়। কর্মীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাইরের মাঠে।

Advertisement

একতলার তল্লাশি অভিযান সেরে বাহিনী যায় দোতলায়। লিফ্‌টে চেপে রাজ্যপাল উঠে যান আগেই। তার পরে শুরু হয় দোতলায় ‘সত্যানুসন্ধান’! সব ঘরের সর্বত্র তল্লাশি চালানোর পর শেষে দোতলায় রাজ্যপালের একটি অফিসে পৌঁছোয় রাজ্যপাল-সহ যৌথবাহিনী। সেই অফিসে তল্লাশির পরে সেখানেই সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যপাল। বলেন, ‘‘তল্লাশিতে কিচ্ছু পাওয়া যায়নি।’’

তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজভবনে এই তল্লাশি অভিযান! শ্রীরামপুরের সাংসদ অভিযোগ করেন, রাজভবনে বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দিচ্ছেন আনন্দ বোস এবং রাজভবনের মধ্যেই অস্ত্রশস্ত্র মজুত রাখা হচ্ছে! এই বিস্ফোরক মন্তব্যেই ক্ষোভপ্রকাশ করে পাল্টা জবাব দেয় রাজভবন। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রবিবারই বিবৃতি জারি করা হয়। আর সোমবার আচমকাই উত্তরবঙ্গ সফর মাঝপথে থামিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন রাজ্যপাল। তাঁর নেতৃত্বেই রাজভবন জুড়ে তল্লাশি অভিযান করা হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সোমবার বেনজির ঘটনার সাক্ষী থাকল বাংলা। রাজভবনে ঘটল অভূতপূর্ব ঘটনা। অতীতে কোনও রাজ্যপালের জমানায় রাজভবনে এমন চিরুনি তল্লাশি চালানো হয়েছে কি না, তা মনে করতে পারছেন না অনেকেই।

তল্লাশি শেষে নাম না-করে কল্যাণকে নিশানা করেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস। তিনি বলেন, ‘‘সাংসদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ বোসের হুঁশিয়ারি, ওই সাংসদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে কি এ ব্যাপারে জানানো হবে? সাংবাদিকদের প্রশ্নে রাজ্যপাল খোলসা করে কিছু না-জানালেও বলেন, ‘‘সময়মতো সব পদক্ষেপ করা হবে।’’ আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কি এ বিষয়ে তাঁর কথা হয়েছে? বোসের উত্তর, ‘‘সাংবিধানিক সহযোগীর সঙ্গে কথাবার্তা গোপনীয় রাখা উচিত। তবে সঠিক সময়ে ঠিক বিষয়গুলি সামনে আনবে রাজভবন। আমি আজ নিজে গোটা রাজভবন জুড়ে তল্লাশি চালিয়ে দেখেছি, কিন্তু কিছুই পাইনি।’’

রাজভবনের চিরুনি তল্লাশি নিয়ে রাজ্যপালকে আবার কটাক্ষ করেন কল্যাণ। তিনি বলেন, ‘‘বোমা রেখে দিয়ে কি কেউ বম্ব স্কোয়াড ডাকেন? এটা ছেলেমানুষি ছাড়া আর কিছুই নয়।’’ হাসি-হাসি মুখে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘অমিত শাহের কাছে নম্বর কমে গিয়েছে। তাই নম্বর বাড়ানোর চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল। উনি যদি সংবিধান মেনে চলেন, তবে ভাল হয়। কিন্তু তিনি তা করেন না।’’ কল্যাণের কটাক্ষ, ‘‘বম্ব স্কোয়াড কেন, উনি তো আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন! এফবিআই-কে দিয়ে তল্লাশি করাতেন’’!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement