লকডাউনে উদ্ধার লীলা মজুমদারের পাণ্ডুলিপি

খুঁজে পাওয়া গেল লীলা মজুমদারের করা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ‘বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী’র ইংরেজি অনুবাদ। ১০টি ছোট ছোট খাতায় সম্পূর্ণ। পাওয়া গিয়েছে তাঁর করা জেমস জয়েসের বিখ্যাত গল্প ‘দ্য বোর্ডিং হাউস’, ‘অ্যান এনকাউন্টার’ এবং উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কিছু নাটকের অনুবাদও।

Advertisement

সুবর্ণ বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২০ ০৪:০১
Share:

অপ্রকাশিত: পুরনো কাগজপত্রের মধ্যে মিলেছে এই পাণ্ডুলিপি।

খুঁজে পাওয়া গেল লীলা মজুমদারের করা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ‘বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী’র ইংরেজি অনুবাদ। ১০টি ছোট ছোট খাতায় সম্পূর্ণ। পাওয়া গিয়েছে তাঁর করা জেমস জয়েসের বিখ্যাত গল্প ‘দ্য বোর্ডিং হাউস’, ‘অ্যান এনকাউন্টার’ এবং উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কিছু নাটকের অনুবাদও।

Advertisement

বছর দেড়েক আগের কথা। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত ‘সন্দেশ’ পত্রিকার তরফে সৌম্যকান্তি দত্ত ও সৌরদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা কাজ শুরু করেছিলেন লীলা মজুমদারের অজস্র লেখালিখি, কাগজপত্র, পাণ্ডুলিপি, চিঠি, ছবি প্রভৃতি নিয়ে। উৎসাহ দিয়েছিলেন লেখিকার ছেলে রঞ্জন মজুমদার ও পুত্রবধূ স্বপ্না মজুমদার (সম্প্রতি প্রয়াত)। উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর অপ্রকাশিত লেখাগুলি খুঁজে বই আকারে প্রকাশ করা।

বেশির ভাগ কাগজপত্রই এখন রয়েছে সৌম্যকান্তির পাইকপাড়ার বাড়িতে। তাই এখন লকডাউনকে কাজে লাগিয়ে চলছে বিপুল কাগজপত্র ঘেঁটে অনুসন্ধানের কাজ। গৃহবন্দি অবস্থায় তাই প্রায়ই হাতে উঠে আসছে নানা মণিমুক্তো। পাওয়া গিয়েছে লীলা মজুমদারকে উপহার হিসেবে দেওয়া নন্দলাল বসুর স্কেচ, তাঁকে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কুমুদনাথ চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, পূর্ণিমা ঠাকুর, অন্নদাশঙ্কর রায়, আশাপূর্ণা দেবী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সত্যজিৎ রায় প্রমুখের চিঠিপত্র। এ ছাড়া, রবীন্দ্রনাথকে নিয়েও অজস্র লেখা লিখেছিলেন লীলা মজুমদার। সেগুলি একত্রিত করে বই আকারে প্রকাশের কাজ শুরু হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: এনআরএস হাসপাতালে একসঙ্গে ৮ রোগী করোনায় সংক্রমিত

আরও পড়ুন: বেড়েই চলেছে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা, দেশে মৃত্যু বেড়ে ১২২৩​

গত বইমেলায় লীলা মজুমদারের বেশ কিছু বই প্রকাশ করেছেন সৌম্যকান্তিরা। তবে এই মুহূর্তে করোনা-কবলিত পরিস্থিতিতে বইপত্রের ব্যবসা বা প্রকাশনার কাজও খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। খুঁজে পাওয়া লেখালিখি নিয়ে কবে বইপত্র তৈরির কাজ শুরু করা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয়ে সকলেই। লীলা মজুমদারের অপ্রকাশিত ইংরেজি রচনাগুলি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দিল্লির বেশ কয়েক জন ইংরেজি প্রকাশক, জানালেন সৌম্যকান্তি।

সম্প্রতি সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষের মুখে পাওয়া যায় তাঁকে নিয়েও তাঁর লীলুপিসির বহু লেখা, যেগুলির মধ্যে বেশ কিছু অপ্রকাশিত। এ বিষয়ে সন্দীপ রায় বললেন, ‘‘লীলুদিদার পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র, অপ্রকাশিত-অগ্রন্থিত যা যা পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলি প্রকাশ করা যেমন দরকার, তেমনই এ সবের ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরির কাজটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাবাকে নিয়েও লীলুদিদার কিছু লেখা আছে। চিঠিপত্রও কিছু কিছু হয়তো সৌম্যকান্তিরা খুঁজে পাচ্ছে। সেই সবটা নিয়ে

বাবার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে একটা প্রকাশনা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে সবাই পরিকল্পনা করছি।’’

লেখালিখি ছাড়াও পাওয়া গিয়েছে অজস্র ফোটোগ্রাফ। রয়েছে রায় পরিবার এবং সত্যজিৎ রায়ের বেশ কিছু দুর্লভ ছবি। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায়ও আগে দেখেননি বলে জানিয়েছেন। সেগুলি ‘রায় সোসাইটি’র আর্কাইভে দিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন সৌম্যকান্তিরা।

লীলা মজুমদারের দৌহিত্রী শ্রীলতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন টিম-সন্দেশের সৌম্যকান্তি দত্ত, সৌরদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অয়ন চট্টোপাধ্যায়দের। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনের দমবন্ধ পরিবেশে এই উদ্ধার সূর্যের আলোর মতোই উজ্জ্বল। দিদিভাইয়ের (লীলা মজুমদার) প্রায় অজানা এবং অপ্রকাশিত লেখাগুলো সংরক্ষণ বা প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে তাঁর স্মৃতিকেই সব চেয়ে বেশি সম্মান জানানো হবে।’’

বিশিষ্ট সাহিত্যিক, প্রয়াত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌত্র তৃণাঙ্কুর বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে সম্প্রতি জানা গিয়েছে, লীলা মজুমদারের করা ‘চাঁদের পাহাড়’-এর একটি ইংরেজি অনুবাদও আছে। সম্ভবত তাঁদের বাড়িতেই। পাণ্ডুলিপিটা পাওয়া গেলে বই করা হবে, সেই আশাতেই অপেক্ষা করে আছেন সৌম্যকান্তিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন