West Bengal Lockdown

মাস্ক না পরলেই বাড়ি, কন্টেনমেন্টে নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করতে কড়া পুলিশ

ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ রাস্তা। জরিমানা না করলেও পুলিশি ধমকের মুখে পড়েছেন মাস্কহীনরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ২০:১১
Share:

লকডাউনের বিধিনিষেধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পুলিশ কর্তারা। —নিজস্ব চিত্র।

ব্যারিকেডে বন্ধ রাস্তা। কোথায় গার্ডরেল, তো কোথাও বাঁশ। দোকানপাটের ঝাঁপ বন্ধ। রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে পুলিশ। মাস্ক না পরে বাইরে বেরোলেই সঙ্গে সঙ্গে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়িতে। সেই সঙ্গে মাইকে লকডাউনের নিয়ন্ত্রণবিধি মেনে চলার ঘোষণা। বাড়ি থেকে ঢোকা-বেরনো কার্যত বন্ধ রাখা হয়েছে। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন কন্টেনমেন্ট জোনে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার পর থেকে এমন ছবিই দেখা গেল। করোনা সংক্রমণ রুখতে রাজ্যের কন্টেনমেন্ট জোনগুলিতে লকডাউনের নিয়ন্ত্রণবিধি কড়া ভাবে কার্যকর করতে পুলিশ রীতিমতো কঠোর ভূমিকা পালন করছে। শীর্ষ পুলিশ কর্তাদের দেখা গেল রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে।

Advertisement

করোনা-সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত রুখতে কন্টেনমেন্ট জোনগুলোতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরও কড়া ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিল নবান্ন। গত মঙ্গলবারই জেলায় জেলায় নতুন কন্টেনমেন্ট বিধি তৈরি করে কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। ঠিক ছিল, আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে আপাতত সাত দিনের জন্য কন্টেনমেন্ট জোনগুলিতে ওই নিয়ন্ত্রণবিধি কঠোর নিয়ন্ত্রণ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশের ফলশ্রুতি হিসেবে এ দিন সকাল থেকেই কন্টেনমেন্ট জোনগুলোতে পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়ে যায়।

কোথাও গার্ডরেল, কোথাও বা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় বিভিন্ন কন্টেনমেন্ট জোনের রাস্তা। গণ্ডিবদ্ধ ওই এলাকায় কেউ যাতে ঢুকতে বা বেরতে না পারেন, সে ব্যাপারেও নজর রাখে পুলিশ। মাস্ক ছাড়া কেউ রাস্তায় বার হলে জরিমানা না করে তাঁকে বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য বুধবার পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নির্দেশ এ দিন পালন করতে দেখা গিয়েছে পুলিশকর্মীদের। জরিমানা না করলেও পুলিশি ধমকের মুখে পড়েছেন মাস্কহীনরা। বাড়িতে তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: বকবেন, কিন্তু ভুল বুঝবেন না: মুখ্যমন্ত্রী

কড়া পুলিশি নজরদারিতে কন্টেনমেন্ট জোন। —নিজস্ব চিত্র।

এ দিন বিকেলে তেলেঙ্গাবাগানের কাছে অধরচন্দ্র দাশ লেনে গিয়ে দেখা গেল, ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রাস্তা। কলকাতার পুলিশের তিন শীর্ষ আধিকারিক সেখানে স্থানীয় থানার পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পর প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে তাঁরা চলে যান করবাগান লেনে। সেখানে রাস্তার উপর একটি চায়ের দোকান খোলা থাকতে দেখে, সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। একটি রেশন দোকানের সামনে বিশাল লাইন পড়ে। তাঁদেরকে পুলিশকর্মীরা বাড়ি চলে যেতে বলেন। মাস্ক ছাড়া কয়েক জন ঘোরাঘুরি করছিলেন রাস্তায়। ধমক দিয়ে তাঁদেরও বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফুলবাগান ও উল্টোডাঙায় যে সমস্ত কন্টেনমেন্ট জোন রয়েছে, সেখানেও যান ওই তিন আধিকারিক। ওই সমস্ত জায়গাতেও গোটা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখেন তাঁরা।

একই ছবি দেখা গিয়েছে বেলেঘাটার তারণকৃষ্ণ লেনের চাউলপট্টি রোডে। গলির মুখেই ব্যারিকেড। গোটা এলাকা কার্যত বন্দি। এলাকার দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ বাজারও। ওই গলি থেকে এক যুবক হেলমেট মাথায় দিয়ে বেরনোর চেষ্টা করলে তাঁকে আটকান পুলিশ কর্মীরা। তিনি নিজেকে এক জন চিকিৎসক বলে পরিচয় দেন। এর পর পুলিশ তাঁর পরিচয়পত্র দেখতে চায়। এর পর তাঁকে বেরতে দেওয়া হয় ওই গলি থেকে। পুলিশের তরফে বলে দেওয়া হয়েছে, কোনও জিনিসপত্রের প্রয়োজন পড়লে থানায় জানাতে হবে। কোনও পরস্থিতিতেই বাইরে বেরনো যাবে না।

আরও পড়ুন: ক্ষমতা ১৫ হাজার, নমুনা পরীক্ষা ১০ হাজারের কম

শহরের রাস্তায় চলছে জীবাণুনাশক ছড়ানোর কাজ। ছবি: পিটিআই।

উত্তরের মতো দক্ষিণেও আলিপুর, শরৎ বসু রোড, চক্রবেড়িয়ার বিভিন্ন জায়গায় লকডাউনের নিয়ন্ত্রণবিধি কড়া ভাবে কার্যকর করছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান মুরলীধর শর্মা নিজে ওই সমস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। কলকাতায় যে ২৫টি কন্টেনমেন্ট জোন চিহ্নিত করা হয়েছে, সেই সমস্ত জায়গায় যাতে ২৪ ঘণ্টা কড়া পুলিশি নজরদারি থাকে এবং সেখানকার বাসিন্দাদের যাতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে পুলিশ— সেই সংক্রান্ত নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা।

চক্রবেড়িয়া রোডে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা। —নিজস্ব চিত্র।

কলকাতায় ২৫টি-র পাশাপাশি হাওড়ায় ৫৬, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৫৪, উত্তর ২৪ পরগনায় ৯৫, হুগলিতে ২১,নদিয়া ২৫, পূর্ব মেদিনীপুরে ১২, পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৩, পূর্ব বর্ধমানে ২১, মালদহে ৪, জলপাইগুড়িতে ১১, দার্জিলিঙে ৫, কালিম্পঙে ৩, উত্তর দিনাজপুরে ৩০, দক্ষিণ দিনাজপুরে ১০, মুর্শিদাবাদে ৪, বাঁকুড়ায় ৯, বীরভূমে ৯, পুরুলিয়ায় ১৩ এবং আলিপুরদুয়ারে ৪টি কন্টেনমেন্ট জোনে একই রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে।

বন্ধ কন্টেনমেন্ট জোনের সব রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র।

কন্টেনমেন্ট জোনগুলিতে কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করার আগে সেই সব জায়গায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। বিকেল পাঁচটা থেকেই চালু হয়ে যায় নয়া নিয়ন্ত্রণবিধি। আপাতত সাত দিনের জন্য ওই নিয়ন্ত্রণবিধি চালু হলেও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন করে বিভিন্ন এলাকায় তা শুরু হতে পারে। ৭ দিন পর পর্যালোচনা করে সেই বিধিনিষেধ কোথাও কোথাও শিথিলও করা হতে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন