গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যকে দেওয়া রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের চিঠি।
লোকে তাঁকে চেনেন ক্যানসারের চিকিৎসক হিসাবে। অথচ তাঁর নামের পাশে দেশ-বিদেশের যে সব ডিগ্রির কথা লেখা আছে, তার সমর্থনে তিনি কোনও নথি পেশ করতে পারেননি বলে অভিযোগ। গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য নামে ওই চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দিয়েছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। তাঁর নিজের যদিও দাবি, সবটাই চক্রান্ত।
কী রকম? গৌরীশঙ্করবাবু দাবি করেছেন, ডিগ্রির তথ্য কাউন্সিলের কাছে পেশ করেছিলেন। কাউন্সিল তা হারিয়ে ফেলেছে। শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এই বিতর্কে তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছে হাসপাতাল।
চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে যোগ্যতা লেখা আছে— এমবিবিএস, সঙ্গে ডিএনবি (এমএনএএমএস), এমআরসিপি (ইউকে), পিএইচডি (গ্লাসগো) এবং এফআইএসএইচ (ইউএসএ)। কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মানস চক্রবর্তীর দাবি, এর কোনওটির সপক্ষেই কাগজপত্র দেখাতে পারেননি অভিযুক্ত চিকিৎসক, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাঁর কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে কাউন্সিল ওঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এক বছরের জন্য কাউন্সিলের খাতা থেকে ওঁর নাম কাটা হল। আপাতত উনি নথিভুক্ত ডাক্তার নন। এক বছর পরে ওঁকে ফের এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে নাম নথিভুক্ত করার জন্য আবেদন করতে হবে।’’
কাউন্সিলের এই কঠোর সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে চিকিৎসকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে রাজ্য জুড়ে একের পর এক ভুয়ো ডাক্তার গ্রেফতার হচ্ছেন, সেখানে ক্যানসারের মতো রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে যদি এত বড় কারচুপি হয়ে থাকে তা হলে কাউন্সিল মাত্র এক বছরের জন্য নাম বাতিল করল কেন? মানসবাবুর জবাব, ‘‘যেহেতু তাঁর এমবিবিএস ডিগ্রির নথি জমা রয়েছে, তাই চূড়ান্ত শাস্তির কথা ভাবা হয়নি।’’ কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন বাতিলের বিষয়টি নেই কেন? কর্তাদের বক্তব্য, ‘‘ওটা টেকনিক্যাল দেরি। ক’দিনের মধ্যেই হয়ে যাবে।’’
গৌরীশঙ্করবাবু একটি চিকিৎসা-সংক্রান্ত সম্মেলনে যোগ দিতে আপাতত পোলান্ডে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘‘বহু দিন ধরে চক্রান্ত চলছে। এখনও রেজিস্ট্রেশন বাতিলের নির্দেশের প্রতিলিপি পাইনি। পেলে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলব।’’
পোলান্ড যাওয়ার আগে নিয়মিত বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেছেন গৌরীশঙ্করবাবু। দেশে ফেরার পরেও রোগী দেখবেন বলে জানিয়েছেন। হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গৌরীশঙ্করবাবুর নামে রোগীদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা যত দূর জানি উনি আসল (অরিজিনাল) নথি পেশ করেছিলেন। কাউন্সিল সেটা হারিয়ে ফেলেছে। দায়টা কাউন্সিলের। তাই প্র্যাকটিস চালাতে বাধা আছে বলে মনে করি না।’’
প্রশ্ন উঠেছে, যোগ্যতা-সংক্রান্ত নথি আগে কেন খতিয়ে দেখল না কাউন্সিল? নাকি গৌরীশঙ্করবাবু যে চক্রান্তের অভিযোগ করছেন, তার কোনও ভিত্তি রয়েছে? কাউন্সিলের কর্তারা এর জবাব দেননি। তবে নথি হারানোর অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেছেন তাঁরা।
এই অবস্থায় এক ক্যানসার চিকিৎসক বললেন, ‘‘শুধু ডিগ্রি-ডিপ্লোমা নয়, দেশ-বিদেশের নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওই চিকিৎসকের যুক্ত থাকার বর্ণনা ইন্টারনেটে রয়েছে। কোনটা সত্যি, কোনটা নয়, তা সাধারণ মানুষের জানা সম্ভব?’’