কলেজে নেতা বা মন্ত্রী নয়, শিক্ষাবিদ চায় রাজ্য

বেশ কয়েকটি জেলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাথা থেকে নেতা-মন্ত্রীদের সরানোর উদ্যোগ আগেই শুরু হয়েছিল। এ বার সেই তালিকায় ডিগ্রি কলেজগুলোকেও আনতে চলেছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৯
Share:

বেশ কয়েকটি জেলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাথা থেকে নেতা-মন্ত্রীদের সরানোর উদ্যোগ আগেই শুরু হয়েছিল। এ বার সেই তালিকায় ডিগ্রি কলেজগুলোকেও আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এ বার থেকে কলেজের পরিচালন সমিতিতে নেতা-মন্ত্রীর বদলে শিক্ষাবিদদের বসানোর ভাবনা শুরু হয়েছে। বেশ কয়েক মাস ধরে আলোচনা চলছে। এই বিষয়ে বিধানসভার আসন্ন অধিবেশনে বিল আনার সম্ভাবনা রয়েছে।

Advertisement

রাজ্যের বিভিন্ন কলেজের পরিচালন সমিতিতে শাসক দলের প্রতিনিধি রাখার রেওয়াজ চলে আসছে বাম জমানা থেকেই। রাজনীতি বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ, ‘অনিলায়ন’ (সিপিএমের প্রয়াত নেতা অনিল বিশ্বাসের নামে কটাক্ষ)-এর জেরে রাজনীতির হাত ধরে স্কুল-কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, সর্বত্রই শীর্ষ পদে নেতা-মন্ত্রীদের চড়ে বসা স্বাভাবিক রীতি হয়ে উঠেছিল। সেই সূত্রে শিক্ষাঙ্গনে শাসক দলের সার্বিক খবরদারি কায়েম হয়ে গিয়েছিল।

শিক্ষাজগতের আশা ছিল, ২০১১ সালে রাজ্যে পটপরিবর্তনের পরে শিক্ষাঙ্গনকে রাজনীতির বেড়াজাল থেকে মুক্ত করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার উল্টোটাই। রাজ্যের অধিকাংশ কলেজের মাথায় জাঁকিয়ে বসে আছেন শাসক দলের নেতারাই। পরিবর্তনের পরেও শিক্ষাঙ্গন রয়ে যায় সেই দলতন্ত্রের ছত্রচ্ছায়ায়। যেমন, শ্যামাপ্রসাদ কলেজে দীর্ঘদিন সভাপতি ছিলেন কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়পুরিয়া কলেজের সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে থেকে গিয়েছিলেন মন্ত্রী শশী পাঁজা। সম্প্রতি একের পর এক গোলমালের জেরে তাঁকে সরিয়ে সেখানে বসানো হয়েছে তৃণমূলের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মৌলানা আজাদ কলেজেরও শীর্ষে রয়েছেন তিনি। এবং এখনও কলকাতার একাধিক কলেজের পরিচালন সমিতিতে রয়েছেন শশীদেবী। ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি থাকার সময়ে এক শিক্ষিকাকে জগ ছুড়ে মারার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

Advertisement

অর্থাৎ সরকার পরিবর্তনের পরেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। রাশ নিজেদের হাতে রাখতে তৃণমূল সরকারও পূর্বতন বাম সরকারের মতো শিক্ষায় দলতন্ত্র কায়েম করতে মরিয়া বলে অভিযোগ ওঠে। জেলা থেকে কলকাতা— সর্বত্রই একই ছবি। অষ্টম শ্রেণি পাশ করা নেতাদেরও বসিয়ে দেওয়া হয়েছে কলেজের পরিচালন সমিতিতে।

সরকার এত দিনে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চাইছে। ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আগেই এই বিষয়ে কথা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাবিদ পরিচালন সমিতির প্রধান হলে আপত্তির কী আছে? বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলব,’’ বুধবার বলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

প্রস্তাবিত ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি। ওই সংগঠনের সভাপতি দেবশিস সরকার বলেন, ‘‘মন্ত্রীর এই উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। আশা করছি, শিক্ষাবিদদের উপস্থিতিতে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার উপযুক্ত বাতাবরণ তৈরি হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন