স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যেই চিকিৎসককে বেদম মারধরের পরেও মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সহ-সভাপতি অভিযুক্ত প্রতুল মাহাতোকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের দাবি তুললেন পুরুলিয়া জেলার সমস্ত ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকেরা। গ্রেফতার না করা হলে তাঁরা আজ, শনিবার থেকে সারা জেলায় কর্মবিরতি শুরু করবেন বলে শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিলেন। রাতে অবশ্য সংবাদমাধ্যমের কাছে সেই সময়সীমা সোমবার পর্যন্ত বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে।
সোমবার রাতে সংঘর্ষে আহত দলীয় কর্মীদের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে বরাবাজার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক বিপ্লব মণ্ডলকে মেঝেতে ফেলে মারধরের অভিযোগ ওঠে প্রতুলবাবু ও অন্যদের বিরুদ্ধে। ওই চিকিৎসকের কপাল ফেটে যায়, হাতেও চোট লাগে। মঙ্গলবার তিনি থানায় অভিযোগ করেন। যদিও প্রতুলবাবুর দাবি, ‘‘আমিই ওই চিকিৎসককে বাঁচাতে গিয়েছিলাম।’’ বুধবার জেলার চিকিৎসকদের ওই দল জেলাশাসকের কাছে গিয়ে ওই নেতাকে গ্রেফতারের দাবি জানান। পরের দিন পুলিশ দাবি করে, দু’জনকে ধরা হয়েছে। যদিও আদালতে তারা জামিন পায়। কিন্তু খুনের চেষ্টার মামলায় ধৃতেরা জামিন পেল কী ভাবে, প্রশ্ন ওঠে তা নিয়ে।
পুলিশের তদন্তে অসন্তুষ্ট চিকিৎসকদের দল এ দিন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে গিয়ে লিখিত ভাবে জানান, ওই ঘটনার পরে আতঙ্কে তাঁরা ঠিক মতো কাজ করতে পারছেন না। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানানোর পরেও মূল অভিযুক্ত ধরা পড়েনি। তাই তাঁরা অবিলম্বে মূল অভিযুক্ত প্রতুল মাহাতোকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে তাঁরা শনিবার সকাল ৯টা থেকে কাজে যোগ দিতে পারবেন না। জেলার ২০ জন ব্লক মেডিক্যাল অফিসার ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্তের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘আমি চিকিৎসকদের পাশে রয়েছি।’’ জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘সরকারি কর্মচারী হওয়ায় তাঁরা পরিষেবা না দিয়ে এ ভাবে কর্মবিরতি করতে পারেন না। আমরা তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু তাঁরা চরমসীমা বেঁধে দিতে পারেন না।’’
শুক্রবার অনেক রাত পর্যন্ত পুরুলিয়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক করেন। রাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ডাক্তাররা ক্ষুব্ধ। তাঁদের ক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিকতাও রয়েছে। সিএমওএইচ ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে বুঝিয়েছেন। আপাতত তাঁরা ধর্মঘটে যাচ্ছেন না।’’ তিনি জানান, নিগৃহীত চিকিৎসক এ দিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁকে কয়েক দিন ছুটি নিয়ে বিশ্রাম নিতে বলেছেন। অজয়বাবু বলেন, ‘‘আমরা পুলিশের উপরে লাগাতার চাপ রাখছি যাতে দোষীরা গ্রেফতার হন।’’
এ দিন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস ফোন ধরেননি। এসএমএস-এরও জবাব দেননি।