‘মাতাল ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেব না, আমার মেয়ে কলেজে পড়েছে’

সেখানেও কয়েক জন আত্মীয় আপত্তি করছিলেন। কানে তোলেননি। মেয়ের বাবা বলেছেন, ‘‘মাতাল ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেব না।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:১৬
Share:

এই ছাদনাতলাতেই যত কাণ্ড। বাঁকুড়ায়। নিজস্ব চিত্র

বরের মানসিক ভারসাম্য নেই বলে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবিতে অপর্ণার বিয়ে রুখে দিয়েছিলেন তার মা। মেয়ের যাতে সেই রাতেই বিয়ে হয়, সে জন্য শরণ নিয়েছিলেন অপুর। বাঁকুড়ার শহরের এক কনের বাবাও বৃহস্পতিবার ছাদনাতলায় দাঁড়িয়ে এক কথায় বন্ধ করে দিয়েছেন মেয়ের বিয়ে।

Advertisement

সেখানেও কয়েক জন আত্মীয় আপত্তি করছিলেন। কানে তোলেননি। মেয়ের বাবা বলেছেন, ‘‘মাতাল ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেব না। আমার মেয়ে কলেজে পড়েছে। এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাব। ওর পাত্রের অভাব হবে না।’’

পরে পুলিশ এসে গোলমাল পাকানোর অভিযোগে পাত্র, তার বাবা ও ভাইকে আটক করে।

Advertisement

পুরুলিয়ার তেলকলপাড়ার যুবকের সঙ্গে বাঁকুড়া শহরের ওই তরুণীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। পাত্রীটির বাবা রাজ্য সরকারের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। তাঁর দুই মেয়ে, এক ছেলে। বড় মেয়েরই বিয়ে ঠিক হয়েছিল।

কনের আত্মীয়েরা জানাচ্ছেন, রাত প্রায় ২টো নাগাদ বরযাত্রী আসে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বোঝা যায়, পাত্র মত্ত। বাবা আর ভাই সামলানোর চেষ্টা করলে গলা উঁচিয়ে তাঁদের সঙ্গে ঝগড়া জুড়ে দিচ্ছিল। খারাপ ব্যবহার করছিল মেয়ের বাড়ির লোক জন এবং পুরোহিতের সঙ্গে। একটা সময় দুম করে আশীর্বাদের আংটিও ছুড়ে ফেলে দেয়।

দু’বাড়ির অনেকেই পাত্রকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এই সমস্ত কাণ্ড দেখার পরে মেয়ের বাবা বেঁকে বসেন। আত্মীয়েরা তাঁকে টলাতে পারেননি। মেয়েও বাবার পাশে দাঁড়ায়। শুক্রবার দুপুরে ওই তরুণীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, উঠোনের এক কোণে রাখা রয়েছে নতুন ড্রেসিং টেবিল, আলমারি।

ওই তরুণীর বাবা বলেন, ‘‘লোকে কী ভাববে, সমাজ কী বলবে— সেই ভয় থেকে মেয়ের জীবনটা নষ্ট হতে দিতে পারি না। যে ছেলে মদ খেয়ে সবার সামনে নিজের বাবাকে অপমান করে, সে আমার মেয়েকে কী করে ভাল রাখত?’’

তরুণীও বললেন, ‘‘স্নাতকোত্তর পড়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। এই বিয়েটা হলে সেটাই হয়তো হত না। বাবা ঠিকই করেছেন।’’

পাত্র যে মত্ত হয়ে ছাদনাতলায় পৌঁছেছিল সেটা স্বীকার করছেন বরযাত্রীর অনেকেও। এ দিকে কনেপক্ষ অভিযোগ করেছে, বিয়ের আগে জোরাজুরি করে তাঁদের থেকে দু’লক্ষ টাকা আর একটি মোটরবাইক নেওয়া হয়েছে। পাত্রের পেশার ব্যাপারেও নাকি মিথ্যা বলা হয়েছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কনের পরিবার অভিযোগ দায়ের করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন