সাক্ষাৎ: আইএস জঙ্গিদের হাতে নিহত দুই শ্রমিকের পরিবারের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছেন দুই মহিলা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন, ‘‘আমরাও তো খোঁজ করছিলাম ওঁদের। কী আর করা যাবে, কষ্ট তো হবেই। কিন্তু বাচ্চাদের মানুষ করতে হবে। কোনও অসুবিধা হলে বলবেন, আমরা দেখব।’’
এক জন দীপালি টিকাদার, ভীমপুরের মহখোলার বাসিন্দা সমর টিকাদারের স্ত্রী। অন্য জন নমিতা সিকদার, তেহট্টের ইলশেমারির বাসিন্দা খোকন সিকদারের স্ত্রী। ইরাকে কাজে গিয়েছিলেন খোকন ও সমর। ২০১৪ সালে ইরাকের জঙ্গি গোষ্ঠী যে-ঊনচল্লিশ জন ভারতীয়কে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে খুন করে, তাঁদের মধ্যে ছিলেন তাঁরা। দীর্ঘ চার বছরের টানাপড়েনের পরে গত ২০ মার্চ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সংসদে জানান, মৃত্যু হয়েছে অপহৃতদের। ৩ এপ্রিল ইরাক থেকে মৃতদেহ এসে পৌঁছয় বাড়িতে। বৃহস্পতিবার রাতেই জেলা প্রশাসন জানিয়ে দেয়, দুই পরিবারের সঙ্গে নবান্নে দেখা করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। সেই অনুযায়ী শুক্রবার খোকনের স্ত্রী নমিতা দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে এবং সমরের স্ত্রী দীপালি মেয়েকে নিয়ে নবান্নে পৌঁছন।
বিকেল সওয়া ৪টে নাগাদ দুই মহিলাকে ডেকে পাঠানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে। তাঁদের চা ও ক্রিম রোল খেতে দেওয়া হয়। প্রায় ৪৫ মিনিটে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন মমতা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরিবারের সব কিছু জানতে চান। নমিতা ও দীপালি, প্রত্যেকের হাতে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন তিনি। নবান্নের খবর, দীপালি ও নমিতাকে হোমগার্ডের চাকরির নিয়োগপত্রও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। খোকনের মেয়ে গীতা মুখ্যমন্ত্রীকে জানায়, যদি চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর চাকরি পাওয়া যেত, তা হলে তার মা অফিসে বসে কাজটা করতে পারতেন। তাঁর সুবিধা হত। মুখ্যমন্ত্রী জানান, পঞ্চায়েত ভোটের পরে তিনি বিষয়টি দেখবেন। খোকন ও সমরের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছে রাজ্য সরকার।
দুই পরিবারকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রী নেমে এসে তাঁদের গাড়িতে তুলে দেন। দীপালিদেবী বলেন, “আমাদের কোনও বিষয়ে যাতে কোনও সমস্যা না-হয়, সেটা মুখ্যমন্ত্রী দেখবেন বলেছেন।” আর নমিতাদেবী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবহারে আমরা মুগ্ধ।”