State News

স্বাধিকারে নয়া ধাক্কা? বিশ্ববিদ্যালয়কে এড়িয়ে সরাসরি বেতন কর্মীদের

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে অভিযোগের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রায় সর্বদাই আর্থিক প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বলেন, ‘‘সরকার বেতন-সহ নানা খাতে বিশ্ববিদ্যালয়কে টাকা দেয়। তাই হস্তক্ষেপ করতেই পারে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৮ ০৪:১১
Share:

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারে সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ে অভিযোগের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রায় সর্বদাই আর্থিক প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বলেন, ‘‘সরকার বেতন-সহ নানা খাতে বিশ্ববিদ্যালয়কে টাকা দেয়। তাই হস্তক্ষেপ করতেই পারে।’’

Advertisement

সেই স্বাধিকার-বিতর্ক উস্কে দিয়ে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, আধিকারিকদের বেতনের টাকা বিতরণের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা হোন বা শিক্ষাকর্মী, অফিসার হোন বা করণিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আর বেতন দেওয়া হবে না। রাজ্য সরকার এ বার ট্রেজারি থেকে সরাসরি শিক্ষক-কর্মীদের অ্যাকাউন্টে বেতন পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আজ, মঙ্গলবার বৈঠকে বসছেন উচ্চশিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা। এই সরকারি সিদ্ধান্তের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের উপরে নতুন করে আঘাত নেমে আসতে পারে বলে শিক্ষা শিবিরের একাংশের আশঙ্কা।

শিক্ষক-কর্মীদের বেতনের টাকা রাজ্য সরকার এত দিন সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পাঠিয়ে দিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বা অর্থ বিভাগের মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মীরা তা পেতেন। সেই নিয়ম বদলাতে চলেছে। বেতনের টাকা বিতরণের ক্ষমতাটুকুও আর বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে রাখা হচ্ছে না। শিক্ষা শিবিরের একটি অংশের ব্যাখ্যা, এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বাধিকারের স্বাভিমান ধাক্কা খাবে বিলক্ষণ। অন্য রকম ধাক্কাও আছে। চালু বন্দোবস্তে শিক্ষক-কর্মীদের তিন মাসের বেতন বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্রিম পাঠিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সেই টাকা ব্যাঙ্কে রেখে কিছুটা সুদ পায়। সেটা তাদের অতিরিক্ত রোজগার। নতুন পদ্ধতিতে সেই বাড়তি রোজগারের সুযোগ আর থাকছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের।

Advertisement

কয়েক বছর আগে, সুরঞ্জন দাস উপাচার্য থাকাকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল। তদন্ত কমিটি গড়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় যত কর্মীর বেতন খাতে সরকারের কাছে টাকা চাইত, তত কর্মীই আদৌ ছিলেন না। বেতন খাতের সেই বাড়তি টাকা ব্যাঙ্কের বিভিন্ন ফিক্সড ডিপোজিটে রাখা হয়েছিল। সেই ঘটনায় ফিনান্স অফিসারের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধরনের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বারে বারেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ বার বেতন-সহ টাকাকড়ির পুরো বিষয়টি থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করে দিতে চাইছে সরকার।

প্রশ্ন উঠছে, শুধুই কি বেতন? নাকি অন্যান্য খাতে সরকার যে-টাকা দেয়, তা-ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আর যাবে না? সব রকম লেনদেনই কি হবে ট্রেজারির মাধ্যমে? গবেষণা ও পঠনপাঠনের জন্য অনেক সময় বিভাগীয় প্রধান অথবা শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে থেকে টাকা অগ্রিম নেন। এ বার কি টাকা খরচের হিসেব দেখালে তবেই টাকা পাওয়া যাবে? উপাচার্যেরা কোথাও গেলে হোটেলের খরচ, গাড়িভাড়া পেয়ে থাকেন। এ বার কি খরচের পরে বিল জমা দিলে তবেই সেই টাকা পাওয়া যাবে? এই ধরনের হরেক প্রশ্ন উড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কর্মী শিবিরে।

পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে দিতেই আজ সল্টলেকের বিজ্ঞানচেতনা ভবনে বৈঠক বসছে বলে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ফিনান্স অফিসারদের ডাকা হয়েছে বৈঠকে। ডাক পেয়েছেন যাদবপুরের রেজিস্ট্রার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (অর্থ)। ডাকা হয়েছে ‘স্টেট বুক বোর্ড’ এবং উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রতিনিধিদেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন