ভোটের বাজারে ডেঙ্গি-যুদ্ধে ভাটা, মশার নৃত্য

কর্তব্যে অবহেলা নেই মশাদের!

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৮ ০৭:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

মশাদের ভোট নেই। নিজেদের মধ্যে মারপিট-রক্তপাতও নেই। মানুষের রক্তচোষা অবশ্যই আছে। এবং আছে ডেঙ্গি ছড়ানোর দায়িত্ব পালনের নিষ্ঠা। কর্তব্যে অবহেলা নেই মশাদের!

Advertisement

মানুষ উন্নততর প্রাণী। তাদের ভোট আছে। মনোনয়ন পর্বের হিংসা-হানাহানি থেকে মামলা-মকদ্দমা আছে। তার জেরে ঘোষিত নির্ঘণ্ট মেনে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে আছে ষোলো আনা সংশয়। অতএব অবশ্যই আছে ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজে অবহেলাও!

কালবৈশাখীর সঙ্গে সঙ্গে কমবেশি বৃষ্টি হতে না-হতেই ডেঙ্গি এবং অজানা জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়ে গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায় দেগঙ্গায়। কিন্তু ভোটের ব্যস্ততায় দেখা মিলছে না জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্তাদের। মার্চে বৈঠক করে ডেঙ্গি প্রতিরোধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলেছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঢক্কানিনাদে সেই কাজ আপাতত শিকেয়।

Advertisement

গত বছর ডেঙ্গি আর অজানা জ্বর মারাত্মক আকার নিয়েছিল দেগঙ্গায়। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, এ বছর ইতিমধ্যেই সেখানে দু’জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। রোজ গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ জন রোগী জ্বর নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়নি। সন্দেহ হলে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ‘‘রোগীদের বেশির ভাগই আসছেন মরসুমি জ্বর নিয়ে,’’ বলছেন দেগঙ্গা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজ সিংহ।

ডেঙ্গি রুখতে মার্চে বৈঠক করে প়ঞ্চায়েতগুলিকে আগেভাগে সতর্ক হতে বলেছিল জেলা প্রশাসন। নির্দেশ ছিল, অঙ্গনওয়াড়ি, আশাকর্মী এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাঁদের নিয়ে দল গড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বরের তথ্য সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে সচেতন করতে হবে বাসিন্দাদের। কিন্তু এলাকায় এই ধরনের কোনও দলের দেখা মেলেনি। আলোচনা অবশ্য হয়েছে। তবে প্রশিক্ষণের কাজ এগোয়নি। জেলাশাসক অন্তরা আচার্য অবশ্য বলছেন, ‘‘জ্বরের খবর এলেই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। চলছে এলাকা সাফসুতরো রাখার কাজও। অন্যান্য এলাকাতেও কাজ এগোচ্ছে।’’

দেগঙ্গার নুরনগরে চারটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে আশাকর্মী আছেন ১৯ জন। আশাকর্মী আজমিরা বিবি বলেন, ‘‘ডেঙ্গি বা অজানা জ্বরের জন্য আলাদা নির্দেশ না-এলেও আমরা বছরের অন্যান্য সময়ের মতো তথ্য সংগ্রহ করে যাচ্ছি।’’ দেগঙ্গা-২ পঞ্চায়েতের আশাকর্মী সরিফা বিবি স্বীকার করলেন, সকলকে নিয়ে ডেঙ্গি প্রতিরোধের ব্যাপারে আলোচনা হলেও কোনও প্রশিক্ষণ হয়নি। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী বিউটি তরফদার বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের কাছ থেকে কী কী জানতে হবে, তার একটি তালিকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও তা পাইনি। কোনও কাজও করতে পারিনি।’’ এই ধরনের নানান সমস্যায় কাজ শুরু করা যায়নি বলে জানাচ্ছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য পরভিন সুলতানা, অণিমা দাসেরাও।

দেগঙ্গার ব্লক আধিকারিক অনিন্দ্য ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তথ্য সংগ্রহ কতটা হয়েছে, পঞ্চায়েত মশা মারার কাজ হয়েছে কি না— সব তথ্যই চাওয়া হয়েছে।’’ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল, কর্মী-সমস্যা প্রসঙ্গে অনিন্দ্যবাবু জানান, অ্যালাইজা মেশিন থাকলেও তার তদারক এবং রক্ত পরীক্ষা করার কর্মীর অভাব রয়েছে। প্রয়োজনীয় কর্মী চেয়ে পাঠানো হয়েছে।

কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের পালা সাঙ্গ না-হলে যে এই সব সমস্যার সমাধান হবে না, ঠারেঠোরে তা জানিয়ে দিয়েছেন জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement