তিনটি ঘর। ভারী তালা ঝুলছে লোহার গরাদে। আপাতত এই ঘর তিনটিই রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের মাথাব্যথার কারণ। পুরুলিয়া মানসিক হাসপাতালের ওই তিনটি ‘আইসোলেশন সেল’ বা নির্জন সেল এ রাজ্যে মানসিক রোগের চিকিৎসার ছবিটাকে আরও এক বার বেআব্রু করে দিয়েছে বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একটি বড় অংশ।
তিন বছর আগে রাজ্যের সব মানসিক হাসপাতাল থেকে আইসোলেশন সেল ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। সেই নির্দেশের পরেই কলকাতার পাভলভ এবং বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে নির্জন সেল ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু তিন বছরেও সেল ভাঙা হয়নি পুরুলিয়ায়। কোনও রোগী সামান্য উত্তেজিত হয়ে পড়লেই সেই ফাঁকা ঘরে একেবারে একা রোগীকে বন্ধ করে রাখা হয় বলে অভিযোগ। গরাদের ফাঁক দিয়ে দু’বেলার খাবারটুকু ভিতরে ঢোকানো হয়। স্নানের ব্যবস্থা নেই, ঘরের মধ্যেই মলমূত্র ত্যাগ। এ ভাবেই অনির্দিষ্ট কাল কাটাতে হয় সংশ্লিষ্ট রোগীকে। তাতে তাঁরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। কয়েক দিন আগে এ বিষয়ে অভিযোগ জমা পড়ে স্বাস্থ্য দফতরে। তার পরেই নড়েচড়ে বসেন দফতরের শীর্ষ কর্তারা। স্বাস্থ্য ভবনে এ বিষয়ে জরুরি বৈঠকও ডাকা হয়।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্ত বলেন, ‘‘আমরা পূর্ত দফতরকে নির্দেশ দিয়েছি। অবিলম্বে সেল ভেঙে দেওয়া হবে। তবে হাসপাতালের কর্তারা আমাদের জানিয়েছেন, ওই ঘরগুলি নামমাত্র টিকে আছে। ওগুলোর কোনওটিতেই এখন আর রাখা হয় না রোগীদের।’’
তবে ওই হাসপাতালে মানসিক রোগীদের নিয়ে কর্মরত সংগঠনের তরফে রত্নাবলী রায়ের অভিযোগ, আইসোলেশন সেল এখনও নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। ‘‘আমরা বারবার এ নিয়ে বলে আসছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। উপরন্তু স্বাস্থ্য দফতর থেকে কোনও প্রতিনিধি এলে রাতারাতি পুরনো জামাকাপড়, বাতিল জিনিসপত্র ঢুকিয়ে ওই ঘরগুলোকে গুদামের চেহারা দেওয়া হয়। এটা স্রেফ চোখে ধুলো দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়,’’ বলেন রত্নাবলীদেবী।
ভেঙে ফেলার সরকারি নির্দেশ সত্ত্বেও কেন টিকে আছে নির্জন সেল? হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের যুক্তি, পুরনো বাড়ি। ওই ঘর ভাঙতে গেলে বাড়ির বাকি অংশে সমস্যা হতে পারে। সেই জন্য এত দিন ভাঙাভাঙির কাজে এগোনো হয়নি। দফতর জোর করলে ভাঙা হবে। তবে তাতে সামগ্রিক ভাবে বাড়িটির ক্ষতির আশঙ্কা আছে।
এ রাজ্যে মানসিক রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে বারবার। পাভলভ মানসিক হাসপাতালে রোগিণীদের নগ্ন করে রাখার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। হাসপাতালে নিয়মিত নজরদারির জন্য সেই সময় একটি কমিটিও গড়ে দিয়েছিল হাইকোর্ট। আপাতত সেই সমস্যা মিটলেও আইসোলেশন সেল নিয়ে বারবার অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্য।
মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত অধিকর্তা নৃপতি রায় বলেন, ‘‘আইসোলেশন সেল ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে তিন বছর আগে নির্দেশ জারি হয়েছে। নানা কারণ দেখিয়ে ওই হাসপাতাল সেটা বলবৎ করেনি। হাসপাতালের সুপার, জেলার স্বাস্থ্যকর্তা, পূর্ত দফতরের কর্তাদের কাছে নির্দেশ গিয়েছে। আশা করি, ওই তিনটি ঘর ভেঙে ফেলা হবে।’’