তসলিমাকে নিয়ে ভয় অ্যাসিড-পোড়া মায়ের

মেয়ে হওয়ার ‘দোষে’ই স্বামী, শ্বশুরঘরের অকথ্য অত্যাচার সইতে হয়েছিল বলে অভিযোগ আঙ্গুরার।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৩৭
Share:

একসঙ্গে: মেয়ে তসলিমাকে কোলে নিয়ে আঙ্গুরা। ছবি: সুমন বল্লভ

মায়ের মুখে বিস্কুট ঠেসে দিতে চায় পাঁচ বছরের তসলিমা নাসরিন। বেমক্কা ঢোঁক গিলে গলাটা টনটন করে আঙ্গুরা বিবির।

Advertisement

তবে বেশি কষ্ট মেয়েটার দিকে চাইলে! ‘‘ওর বাবা একবার নিয়ে গেলে মেয়েটারে ফিরে পাব কি?’’

মেয়ে হওয়ার ‘দোষে’ই স্বামী, শ্বশুরঘরের অকথ্য অত্যাচার সইতে হয়েছিল বলে অভিযোগ আঙ্গুরার। ২০১৪-র ৮ এপ্রিল, তাজমুল হক তাঁকে জোর করে অ্যাসিড খাইয়ে দেয় বলে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানায় অভিযোগও দায়ের হয়। আঙ্গুরার প্রাক্তন স্বামী তাজমুল কিছু দিন জেলও খেটেছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। অ্যাসিড হামলায় অভিযুক্ত সেই যুবকই এখন বাড়িতে চড়াও হয়ে মেয়েটাকে ছিনিয়ে নিতে হুমকি দিচ্ছে বলে কাঁদতে থাকেন দিশাহারা মা।

Advertisement

সদ্য তরুণী আঙ্গুরার বিয়ে হয় মাত্র ১৩ বছরে। মেয়ে হওয়ার পরে বছর দেড়েক বাপের বাড়িতেই পড়েছিলেন তিনি। মোড়লরা বার বার তাকে ঘরে নিতে বললেও শোনেনি স্বামী। তবু ছানা কোলে সংসারের আশায় যেচেই শ্বশুরবাড়িতে হাজির হন আঙ্গুরা। তাঁর অভিযোগ, নাগাড়ে চলতে থাকে মারধর, খেতে না-দিয়ে অত্যাচার। উল্টে, তালাকনামার কাগজ পাঠায় তাজমুল। বর, শাশুড়িরা চেপে ধরে শেষমেশ শৌচাগারের অ্যাসিডের বোতল মুখে ঢেলে দেয় আঙ্গুরার।

চার বছরে তিন লক্ষ টাকা, সরকারি ক্ষতিপূরণটুকু যা জুটেছে! কিন্তু দগ্ধ খাদ্যনালি অস্ত্রোপচারের ধার মেটাতে সব শেষ। এই সে-দিনও পেটে নল ঢুকিয়ে খাওয়াতে হত আঙ্গুরাকে। গলা দিয়ে দুধ ছাড়া কিছু নামত না। এখনও কথা বললে, গলার কাটা দাগটা ফুলে ওঠে। এক গাল ভাতের সঙ্গে এতটা জল না-খেলে গলা দিয়ে নামে না। তবে মাস ছয়েক আগে পাশের গ্রামের খেত মজুর যুবক মহিবুল শেখ তাঁকে বিয়ে করেছেন। আঙ্গুরার দাদা ঠিকে মজুর মুজিবর রহমানের কথায়,‘‘বেলডাঙায় নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করত বোন। তাতেও উঠতে-বসতে গঞ্জনা। ছেলেটার মা বিয়েটা দিতে চাইলে তাই মেনে নিয়েছি।’’ মামা-বাড়ির গ্রামের স্কুলেই পড়ছে ছোট্ট তসলিমা। বাবাকে ভাল ভাবে চেনেও না মেয়ে।

তবে তাজমুলের বাবা রাজমিস্ত্রির ঠিকাদার হজরত আলির ভালই প্রতিপত্তি। নাতনির অধিকার পেতে বহরমপুর কোর্টে মামলা ঠুকেছেন। বলছেন, ‘‘আমার ছেলে অ্যাসিড মেরেছে কি না, কোর্টেই প্রমাণ হবে!’’ অভিযুক্ত তাজমুলও জামিনে বেরিয়ে বিয়ে করেছে, ফের সন্তানও হয়েছে। আঙ্গুরার আশঙ্কা, ওদের খপ্পরে পড়লে মেয়েটা বাঁচলে হয়!
উকিলের খোঁজে কলকাতায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অফিসেও চলছে তাঁর ছোটাছুটি। হাইকোর্টের উকিল ঐন্দ্রিলা চক্রবর্তী আশ্বাস দেন, ‘‘মামার বাড়িতে তসলিমা কিন্তু নিরাপদ। সেটা গুরুত্বপূর্ণ!’’ অ্যাসিড-পোড়া মায়ের কোলে বসে তখন হাসিমুখে পা দোলায় একরত্তি তসলিমা নাসরিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement