বন্ধু: বিকেলে চপ ভাজছেন ধনপতি সেন। সকালে এখানেই ফল বিক্রি করেন মহম্মদ উসমান। —নিজস্ব চিত্র।
যা হওয়ার হয়েছে। এ বার সামনে তাকানো। হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শহরে শান্তি ফেরানোর প্রয়াস।
ঠিক সেই চেষ্টাই শুরু হয়েছে গোষ্ঠী সংঘর্ষে তেতে থাকা আসানসোল, রানিগঞ্জে। ২৬ মার্চ রানিগঞ্জের বড়বাজারে সংঘর্ষের সময় শ’খানেক দোকানে ভাঙচুর, লুঠপাট হয়েছিল। হয়েছিল অগ্নিসংযোগও। সেই অশান্তি দূরে ঠেলে স্বাভাবিক হচ্ছে রানিগঞ্জ। স্বাভাবিক করছেন এলাকার মানুষই।
শুক্রবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ক্ষতিগ্রস্ত দোকান সারানোর কাজ চলছে। কাকা-ভাইপো পবন খেতান, সঞ্জিত খেতানের পুড়ে যাওয়া কাপড়ের দোকান মেরামত করছেন মহম্মদ দানিশ আনসারির নেতৃত্বে পাঁচ যুবক। সঞ্জিতের কথায়, ‘‘ঘটনার দিন গুড্ডু খানের জুতোর দোকানও পুড়েছিল। কিন্তু, দমকল আসতেই গুড্ডু আমার দোকানে এসে বলেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা পাশে আছি’।’’
সেই পাশে থাকার ছবিটাই এ দিন স্পষ্ট। দানিশের সঙ্গে কাজ করছিলেন চৈতন কেওড়া, মহম্মদ আরবাজ। তাঁরা বলে দিলেন, ‘‘যারা ঝামেলাবাজ, তারা গোলমাল পাকিয়ে চলে গিয়েছে। আমাদের ভিটেমাটি এই শহর। এত দিন যে ভাবে মিলেমিশে ছিলাম, তেমনই থাকতে চাই।’’ আর এক জুতোর দোকানের মালিক মহম্মদ আখতার আনসারি বললেন, ‘‘সবাই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যত দিন দোকান মেরামতি না হচ্ছে, তত দিন তাঁদের দোকানে বসতে বলছেন।’’
শান্তি চায় আসানসোলও। আসানসোল বাজারে ১৫ বছর ধরে এক ছাদের তলায় দুই দোকান চালান মহম্মদ উসমান ও ধনপতি রায়। সকালে ফল, বিকেলে তেলেভাজা। সাম্প্রতিক অশান্তি সেই বন্ধুত্বে চিড় ধরাতে পারেনি। দু’জনেই বলছেন, ‘‘এই দোকান চলছে আমাদের বন্ধুত্বের জন্য। এখানে পয়সার লেনদেনের জায়গা নেই। ধর্মের বেড়াও নেই।’’ যেমন আসানসোলের তালপুকুরিয়া। এখানে পাঁচশো পরিবারের বেশির ভাগই সংখ্যালঘু। স্থানীয় বাসিন্দা রাজেশ প্রসাদ, ইমরান খানরা জানান, একশো বছর ধরে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ পাশাপাশি বাস করছে। দুর্গাপুজো বা মহরম— সব উৎসবে সবাই সামিল হন।