সুতোয় ঝুলে মইনুল, হাত বাড়িয়ে তৃণমূল

শাসক শিবির সূত্রের খবর, রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তাঁর সাংসদ-ভাই সক্রিয় হয়েছেন মইনুলকে কাছে টানতে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৫৫
Share:

হিন্দুত্ববাদী শক্তির আগ্রাসন ঠেকাতে যখন দিকে দিকে তৎপরতা, সেই সময়েই দলের অন্যতম মুসলিম মুখের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষীণ হয়ে এল সিপিএমের! খাতায়-কলমে তিনি এখনও দলের সদস্য। তবে আসন্ন পার্টি কংগ্রেসে যাচ্ছেন না, তার পরে জেলার নতুন সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হলে সেখানেও থাকতে চান না বলে জানিয়ে দিয়েছেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসান।

Advertisement

দলের অন্যতম বলিয়ে এবং লিখিয়ে এই নেতার সঙ্গে সিপিএমের সম্পর্ক এখন বলতে গেলে সুতোয় ঝুলছে! রাজ্য সম্মেলনে মইনুলকে বাদ দেওয়া হয়েছে নতুন রাজ্য কমিটি থেকে। যদিও তার আগেই জানুয়ারিতে দলের সদস্যপদ নবীকরণ তাঁর হয়ে গিয়েছিল। মইনুলের এখনকার অবস্থান, ‘‘দলের সাধারণ এক জন সদস্য! পঞ্চায়েত ভোট যাক। তার পরে ভাবব, কী করা যায়!’’

ঘটনাচক্রে, সিপিএমের দৈনিক মুখপত্রে রবিবারই নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে মইনুলের। আর এ দিনই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘থুতু দিয়ে হৃদয় জোড়া যায় না’! মুখপত্রে যা লিখেছেন, তার সূত্র ধরেই প্রাক্তন সাংসদ বলছেন— ‘‘ইতিহাসে এমন সময় আসে, যখন ন্যূনতম কর্মসূচিই বৃহত্তম কর্মসূচি হয়ে দাঁড়ায়। এখন বিজেপিকে ঠেকানোই কর্মসূচি। তার জন্য যা করতে হয়, করব!’’ মইনুলের মতে, বিজেপির মোকাবিলায় যেখানে যে শক্তিশালী, সেখানে তার নেতৃত্ব মানতে হবে। কোথাও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে হবে, কোথাও তৃণমূলকে মানতে হবে।

Advertisement

মইনুল জানেন, তাঁর এই সওয়াল সিপিএম মানবে না। নিজেকেই তাই গুটিয়ে নিচ্ছেন তিনি। আর সুযোগ বুঝে সক্রিয় হয়েছে তৃণমূল। শাসক শিবির সূত্রের খবর, রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তাঁর সাংসদ-ভাই সক্রিয় হয়েছেন মইনুলকে কাছে টানতে। যাতে দরকারে মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনে তাঁকে প্রার্থী করা যায়। ওই আসনটি এখন সিপিএমেরই দখলে। আর মইনুল ওই কেন্দ্র থেকে আগে দু’বার সাংসদ হয়েছেন।

আরও পড়ুন: বিজেপির দল কেন আসানসোলে, প্রশ্ন অধীরদের

তবে মুর্শিদাবাদের প্রয়াত প্রাক্তন সাংসদ মান্নান হোসেনের পুত্র সৌমিক কয়েক বছর ধরে জেলায় পরিশ্রম করছেন তৃণমূলের হয়ে। তাঁদের ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখেই তৃণমূল নেতৃত্ব এখনই এই নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। দলের এক রাজ্য নেতার মন্তব্য, ‘‘লোকসভা ভোটের তো এখনও দেরি আছে!’’

বনেদি বংশের সন্তান মইনুল পারিবারিক ভাবেই কিছু সম্পত্তির উত্তরাধিকারী। কিছু দিন আগে সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে হঠাৎই তাঁর সেই সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে কমিশন বসানো হয়েছিল! অপমানিত মইনুল সে দিনই দল ছাড়তে চেয়েছিলেন। সিপিএমেরই একাংশের প্রশ্ন, বিত্তবান বলে শিশির বাজোরিয়াকে সদস্যপদ দেওয়া যায়নি, তিনি গিয়েছেন বিজেপি-তে। এখন মইনুলও ব্রাত্য?

রাজ্য সম্মেলনে নেতারা বলেছিলেন, রাজ্য কমিটিতে তাঁকে রাখা হবে না। বিদ্রোহ করেননি মইনুল। শুধু সুতোটা আলগা করে দিয়েছেন। আর যিনি পারতেন চাকা ঘোরাতে, তিনি পাম অ্যাভিনিউয়ে আপাতত সন্ন্যাস নিয়েছেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন