নেতাজিগৃহে ‘নতুন প্রেরণা’ পেলেন হাসিনা

হাসিনা তাঁর বক্তৃতাতেও বলেন, ‘‘নেতাজি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে না দাঁড়ালে ’৪৭ সালে ভারত, পাকিস্তান কারও স্বাধীনতাই সম্ভব হত না। পরে বাংলাদেশকে আর এক বার স্বাধীনতার জন্য লড়তে হয়, সে অন্য কথা!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৮ ০৩:১৯
Share:

অতীত ছুঁয়ে: এক ফ্রেমে শেখ মুজিবুর রহমান ও শিশিরকুমার বসু। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে সেই ছবি তুলে দিলেন কৃষ্ণা বসু ও সুগত বসু। পাশে রয়েছেন শেখ হাসিনার বোন রেহানা। শনিবার, নেতাজি ভবনে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

বহু যুগের ও পার থেকে ভেসে আসছে সেই কণ্ঠস্বর! মঞ্চে আসীন রাষ্ট্রনেতার গাম্ভীর্যের মোড়ক খসে পড়ছে। যেন খানিক অস্থির দেখাচ্ছে তাঁকে।

Advertisement

শনিবার সন্ধ্যা। এলগিন রোডে নেতাজি ভবনের চিলতে সভাকক্ষ গমগম করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠস্বরে। নেতাজির ত্যাগ ও তিতিক্ষার আদর্শ চিরকালের জন্য বিশ্বের সকল মুক্তিকামী মানুষের চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে। ...তিনি নেই।...কিন্তু তিনি চির অমর ও অক্ষয় হয়ে থাকবেন...।

১৯৭২ সালে নেতাজির জন্মদিনে নবজাতক রাষ্ট্র বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পাঠানো এই বার্তাটিই বেজেছিল এলগিন রোডের বাড়িটায়। তাঁর প্রিয় ‘আব্বু’র কণ্ঠস্বরের ছোঁয়াচ মথিত হল বঙ্গবন্ধুকন্যা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাতেও। যিনি বঙ্গবন্ধুর নেতাজি-আবেগের জের টেনেই বলবেন, ‘‘নেতাজি সুভাষ যে আলো জ্বালিয়েছিলেন, তা বিচ্ছুরিত হয়েছিল আমাদের মুক্তি সংগ্রামে।’’ নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো-য় শিশিরকুমার বসুর চেষ্টায় এত দিন সংরক্ষিত শেখ মুজিবের সেই বার্তার সিডি সংস্করণ এ দিন উপহার পেয়েছেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, নেতাজি সুভাষ ও বসু পরিবারের সম্পর্কের নানা স্মারক সুভাষচন্দ্রের ভাইপোবউ কৃষ্ণা বসু ও তাঁর পুত্র সুগত বসু এ দিন বাংলাদেশ নেত্রীর হাতে তুলে দেন। সেই সঙ্গে নেতাজির বাড়ি থেকে প্রাণভরে অক্সিজেন গ্রহণের কথাই বলে গেলেন শেখ হাসিনা।

Advertisement

এ বারের কলকাতা সফরে জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রনাথের বাড়ি তাঁর কাছে তীর্থের স্বাদ এনে দিয়েছিল। আর এ দিন নেতাজির বাড়িতে দাঁড়িয়ে হাসিনা বললেন, ‘‘এখানে এসে নতুন করে দেশের কাজ করার প্রেরণা পেলাম।’’ হাসিনার কথায়, ‘‘আমাদের দেশে এখনও লড়াই চলছে। আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা যেন পূর্ণ হয়। এই বাড়িতে এসে মনে হল, দেশের মানুষকে ভালবাসা, দেশের কাজ করে যাওয়া— এটাই জীবনের ব্রত হওয়া উচিত।’’ উল্লেখ্য, এ বছরই বাংলাদেশে খুব গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন।

এ বাড়ির অতিথিদের লেখার খাতায় নেতাজির কালজয়ী আহ্বান, ‘তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’র সঙ্গেই বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ‘স্বাধীনতার ডাক’-এরও তুলনা টেনেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। শেখ মুজিবের সেই আহ্বান এখন ইউনেস্কো-র বিশ্ব হেরিটেজ তালিকার অন্তর্ভুক্ত। হাসিনার চোখে নেতাজির সেই ডাক ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে ‘যুগান্তকারী বাণী’। আর শেখ মুজিবের স্বাধীনতার আহ্বান হল ‘ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য’, যা বাংলাদেশের অজস্র মানুষকে আত্মবলিদানে প্রেরণা জুগিয়েছিল। হাসিনা তাঁর বক্তৃতাতেও বলেন, ‘‘নেতাজি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে না দাঁড়ালে ’৪৭ সালে ভারত, পাকিস্তান কারও স্বাধীনতাই সম্ভব হত না। পরে বাংলাদেশকে আর এক বার স্বাধীনতার জন্য লড়তে হয়, সে অন্য কথা!’’

নির্ধারিত বিকেল পাঁচটার প্রায় এক ঘণ্টা বাদে এলগিন রোডের বাড়িতে হাসিনাকে স্বাগত জানান শহরের মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পরপর দেখেন, নেতাজির মহানিষ্ক্রমণের সেই বিখ্যাত গাড়ি, নেতাজির শয়নকক্ষ, কংগ্রেস সভাপতি থাকার সময়কার অফিসঘর, শরৎচন্দ্র বসুর ঘর ইত্যাদি। ১৯৩৯ সালে মহাজাতি সদনের একটি সভায় রবীন্দ্রনাথ ও সুভাষের পাশাপাশি বসা ভিডিও-ছবি দেখছিলেন মন দিয়ে। তাতে রবীন্দ্রকণ্ঠে আবৃত্তি ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ও শোনা গেল।

বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি এ দিন উপহার হিসেবে এনেছিলেন হাসিনাও। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও নেতাজি পরিবারের আত্মিক যোগের বহমানতাটুকুই শেষ কথা বলে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন